হীমেল মিত্র অপু কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধিঃ কুড়িগ্রামের উলিপুরে আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবসে সংবাদকর্মী ও পুলিশের সহযোগীতায় সুইটি ফিরে পেয়েছে তার সংসার।
বৃহস্পতিবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবসে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বামনাছরার এক গৃহবধুকে আত্মহত্যার পথ থেকে সরিয়ে দম্পত্তি ও তাদের পরিবারকে মিলিয়ে দিয়েছে থানা পুলিশ ও মফস্বল সাংবাদিকরা।
জানা গেছে, উপজেলার তবকপুর ইউনিয়নের বামনাছরা গ্রামের মোঃ ছক্কু মিয়ার কন্যা মোছাঃ সুইটি বেগম (১৯) গতকাল বুধবার বিকেলে তার নিজ বাড়িতে ঘরের ধরনার সাথে ওড়না পেচিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। বাড়ির লোকজন ও স্থানীয়রা সুইটিকে বুঝিয়ে স্থানীয় এক মফস্বল সাংবাদিকের মধ্যস্থতায় সুইটির শ্বশুড় পরিবারের সাথে সমঝোতার চেষ্টা করে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ২০১৮ সালের আগষ্টে তাদের মধ্যে ধর্মীয় ও সামাজিক রীতিনীতি মেনে বিয়ে হলেও তাদের কোন বৈধ নিকাহনামা বা বিবাহ রেজিঃ ছিলো না। এই সুযোগে তারা মেয়েটিকে তার পরিবারের পক্ষের মানুষদের মাধ্যমে দেনমোহরানা বাবদ ২২ হাজার টাকা দিয়ে রফাদফা করার চেষ্টা করে। অপরদিকে উলিপুর পুর্ব বজড়া নিবাসী ছেলে রব্বানী মন্ডলের পরিবার তাদের ছেলেকে অন্যত্র বিয়ে দেয়ার প্রস্তুতি নেয়। এমন খবরে সুইটি বেগম নিরুপায় হয়ে জীবন শেষ করে দিবে এমন বাস্তব বিবর্জিত সিদ্ধান্ত নেয় বলে ধারনা করা হয়। গতকাল বুধবার রাত ৯ টার দিকে সুইটি বেগম তার মা সহ স্বশরীরে উলিপুর থানায় উপস্থিত হয়ে পুরো ঘটনার বিবরন সহ বৈধ বিয়ে ছারা ঘর সংসার ও ধর্ষনের লিখিত অভিযোগ করে।পরে উলিপুর থানা অফিসার ইনচার্জ মোয়াজ্জেম হোসেন তড়িৎ এস আই মশিউর রহমানের নেতৃত্বে অভিযোগের সত্যতা তদন্তে ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশনা প্রদান করেন। তবকপুর ও বজড়া ইউনিয়নের বিট পুলিশিং এর দুই পুলিশ অফিসার, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং অভিভাবকদের সমন্বয়ে উলিপুর থানা চত্বরে দুই পরিবার সহ সুইটি- রব্বানী দম্পত্তি ও স্থানীয়দের মুখোমুখি করা হলে গোপন একটি তথ্য সামনে চলে আসে এবং এতেই এই দাম্পত্যকলহ বিরোধের অবসান তরান্বিত হয়।
বধু সুইটি বেগম ও তার অভিভাবকগণ এতদিন জানতেন তাদের মেয়ের বিবাহ হলেও তাদের বৈধ কোন নিকাহ নামা করা হয় নাই। পরে পুলিশিং কাউন্সিলিং এ সত্য উদঘাটন হয়। তারা উভয়ে দুর আত্মীয় স্বাক্ষীদের সামনে গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগন্জ উপজেলার ১১ নং হরিপুর ইউনিয়ন কাজী মোঃ ফজলুল হক কর্তৃক নিকাহ নামায় সব কিছু স্বাক্ষর ও দেনমোহরানা ধার্য্য করে রাখলেও বয়স কম থাকার সুযোগটি নেয় ছেলে পক্ষ।
এতে ২৪-০৮-২০১৮ ইং বিবাহ পরানোর তারিখ দেখানো হলেও বৃহস্পতিবার ( ১০ সেপ্টেম্বর) ২০২০ইং কাজী অফিসের সিল ও কাজীর স্বাক্ষর সহ নিকাহনামা পত্রটি হস্তান্তর করেন হরিপুর কাজী অফিস। আজকের সময় অনুযায়ী বর রব্বানীর বয়স ২২ বছর ও কনে সুইটি বেগমের বয়স ২২ বছর পুর্ন দেখানো হয়েছে। উভয় পরিবার তাদের বিরোধ মীনাংসা পুর্বক ছলে রব্বানীর পিতা ঝুট হামিদ ও মাতা তাদের পুত্রবধুকে বরন করে নেন।
উল্লেখ্য, সুইটির বাবা মা তাদের মেয়ে সুইটি বেগম সহ জীবন জীবিকার কারনে ঢাকায় অবস্থান করতেন। প্রায় ২ বছর আগে উলিপুর বজড়া ইউনিয়নের পুর্ব বজড়া এলাকার আঃ হামিদ মন্ডল ওরফে ঝুট হামিদের পুত্র মোঃ রব্বানী মন্ডল (২৩) গার্মেন্টস চাকুরীর সুবাদে ঢাকায় পাশাপাশি বসবাস করতেন। সুইটি ও রব্বানীর মধ্যে পরিচয় ও প্রেমের সম্পর্কে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। সুইটি ও রব্বানী ঢাকায় স্বামী স্ত্রী হিসেবে একসাথে বসবাস করলেও বজড়া শ্বশুড় বাড়িতে শ্বশুড় শ্বাশুড়ি কর্তৃক অবহেলা, মানসিক নির্যাতন সহ বউ কে ছেলের সাথে সংসার করাবে না এমন অভিযোগের কথা সুইটি ও তার পরিবার থেকে বলা হয়েছিল।