ডিমের বাজারে আগুন,অতীতের সব রেকর্ড ভাঙল ডিমের দাম।
দেশে প্রতিদিন বাণিজ্যকভাবে ৪ কোটির মতো ডিম উৎপাদন হয়ে থাকে। নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকায় দৈনন্দিন খাদ্য চাহিদা মেটাতেই হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এমন অবস্থায় ফের বেড়েছে গরিবের প্রোটিনখ্যাত ডিমের দাম।
বুধবার (৯ আগস্টের) ঢাকার খুচরা বাজারে প্রতি ডজন ফার্মের ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ টাকায়। আর পাড়া-মহল্লার মুদি দোকানে বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ১৭০ টাকা, যা আগে ১৫০ টাকা ছিল। ডিমের দামে সর্বকালের রেকর্ড ছাড়ালেও নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করছে তদারকি সংস্থা। ফলে আগে এক পিস ডিম ক্রেতাসাধারণ ১২ টাকা কিনতে পারলেও এখন ১৪-১৫ টাকা খরচ করতে হচ্ছে।
এদিকে প্রান্তিক খামারি ও খাত-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্প্রতি ব্রয়লার মুরগি উৎপাদন খরচ নির্ধারণ করলেও ডিমের বাজার দরের বিষয়ে এখনো কোনো মানদণ্ড ঠিক করেনি।
মন্ত্রণালয় ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ কেজিপ্রতি ১৭০ থেকে ১৭৫ টাকা অনুমোদন করেছে, যা এক বছর আগে ছিল ১৪০ টাকার মধ্যে। এরপর থেকে মুরগির দাম পর্যায়ক্রমে ১৬৫ টাকা থেকে বেড়ে গতকাল পর্যন্ত ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকায় উঠেছে।
অন্যদিকে উৎপাদন খরচ নির্ধারণ না হওয়ায় ডিমের বাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে কোনো ধারণা করা যাচ্ছে না। খামারি পর্যায় থেকে জানা গেছে, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক ব্যয়সহ বর্তমানে প্রতিটি ডিমের উৎপাদন খরচ ১১ টাকার বেশি, যা পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১২ টাকা ২০ পয়সা থেকে ১২ টাকা ৪০ পয়সা পর্যন্ত। আর দুদিনের ব্যবধানে খুচরা বাজারে প্রতি ডজন (১২ পিস লাল/বাদামি) ডিম ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়ে ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বৃষ্টির কারণে ডিম সংগ্রহ ও সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে, সেজন্য দাম বাড়ছে। অন্যদিকে প্রান্তিক খামারিদের দাবি, পোলট্রি খাদ্যের দামের বিপরীতে ডিমের দাম তুলনামূলক কম। পাশাপাশি বৃষ্টিপাত বাড়ার কারণে খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। লোকসানে পড়ে অনেক খামারি ব্যবসা বন্ধ রেখেছেন। এ সুযোগে বড় প্রতিষ্ঠানগুলো চাহিদার সুযোগে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
যদিও ডিমের উৎপাদন খরচ নিয়েও কাজ করছে মন্ত্রণালয়। চলতি বা আগামী মাসের মধ্যে ডিমের উৎপাদন ব্যয় ঠিক করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, গত দুদিনের ব্যবধানে প্রতি হালি (চার পিস) ফার্মের ডিমে ৭.১৪ শতংশ দাম বেড়েছে। আর গত বছর একই সময়ের তুলনায় প্রতি হালি ডিম ২৫ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। বুধবার রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হয়েছে ১৬৫ টাকা। আর পাড়া-মহল্লার মুদি দোকানে বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ১৭০ টাকা, যা দুই দিন আগে ১৫০ টাকা ছিল। আর গত বছর একই সময় প্রতি ডজন ডিম ১৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ফলে বছরের ব্যবধানে প্রতি হালি ডিম ৪০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, মুরগি, ডিম ও ফিডের দাম নিয়ন্ত্রণ করে থাকে বেশ কয়েকটি করপোরেট কোম্পানি। প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিরা মোট চাহিদার ৯০ শতাংশ ডিম ও মুরগি উৎপাদন করে। মাত্র ১০ শতাংশ ডিম ও মুরগি উৎপাদন করলেও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় করপোরেট কোম্পানিগুলো একচেটিয়া বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। সময় অসময়ে ডিম ও মুরগির দাম বাড়িয়ে দিয়ে তারা লাভবান হলেও প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিরা হুমকির মুখে পড়ছে।
বুধবার ডিমের মূল্য সহনীয় করার বিষয়ে বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, গত বছর ডিমের দামে নৈরাজ্য করায় তদারকি করে মূল্য সহনীয় করা হয়েছিল। অসাধুদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছিল। ভোক্তার স্বার্থ বিবেচনায় এবারও অভিযান পরিচালনা করা হবে। তবে এটি দেখার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরও আছে। ডিমের দাম কেন বাড়ছে, উৎপাদন খরচ বেড়েছে কিনা; সেটি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ভালো বলতে পারবে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বা প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় যদি আমাদের এ বিষয়ে কাজ করতে বলে আমরা ব্যবস্থা নেব।