চাঁদপুরে পদ্মা ও মেঘনা নদীতে জাটকা রক্ষায় দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে ইলিশ ধরা শুরু হয়েছে। দুই মাস পর ইলিশ ধরা শুরু হলেও বাজারে নেই সেই আমেজ। নদীতে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ মিলছে না। এর প্রভাব পড়েছে দেশের বৃহৎ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র চাঁদপুর মাছঘাটে। চাহিদার তুলনায় ঘাটে ইলিশ কম আসায় দাম আকাশছোঁয়া।
বৃহস্পতিবার (১ মে) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ইলিশের পাইকারি বাজার চাঁদপুর বড়স্টেশন মাছঘাট ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ আড়তই ফাঁকা পড়ে আছে। আড়তের পাশে বসে কিছু খুচরা ব্যবসায়ী অল্প কিছু ইলিশ বিক্রির জন্যে অপেক্ষা করছেন। অলস সময় কাটাচ্ছেন আড়তের কর্মচারীসহ অন্যান্য মৎস্য শ্রমিকরা। ঘাটে আজ প্রায় ২০০ কেজি ইলিশ সরবরাহ হয়েছে বলে জানান তারা।
ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে ১ কেজি সাইজের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার থেকে ৩২০০ টাকায়, ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২৫০০ থেকে ২৬০০ টাকায়, ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার থেকে ২১০০ টাকায়।
ক্রেতারা বলছেন,ইলিশের দাম আকাশছোঁয়া, তাই তারা স্বাচ্ছন্দে ইলিশ কিনতে পারছেন না।খালি হাতে ফিরে যাচ্ছে তারা।
আর বিক্রেতারা বলছেন, চাহিদা অনুযায়ী ইলিশ ঘাটে না আসায় দাম চড়া। আগামী দিনে পর্যাপ্ত ইলিশ ঘাটে এলে দাম আরও কমে আসবে।
মাছ কিনতে আসা নোয়াখালীর সন্দীপের জুয়েল বলেন, আমি মাছ কিনতে এসেছি। মাছের দাম বেশি হওয়ায় খালি হাতে ফিরে যাচ্ছি।
আরেক ক্রেতা আতিক বলেন, আমি মাছ কিনতে কুমিল্লা থেকে এসেছি। অনেকক্ষণ ঘাটে ঘোরাফেরা করলাম। কিন্তু মাছ কিনতে পারলাম না। আমার কাছে মনে হচ্ছে স্বর্ণের চেয়েও মাছের দাম বেশি। মাছের দাম বেশি থাকায় খালি হাতে বাড়িতে চলে যাচ্ছি।
সফিক নামে এক ক্রেতা বলেন, মাছের দাম অনেক বেশি। দেড় ঘণ্টা ঘোরাঘুরি করলাম মাছ কেনার জন্য। কিন্তু মাছ কিনতে পারলাম না। দাম আমার আয়ত্তের বাইরে চলে যাচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা ক্রেতা আব্দুর রহমান বলেন, এক কেজি ওজনের ইলিশের দাম ৩২০০ থেকে ৩৩০০ টাকা করে কিনেছি। এছাড়া অন্য মাছ ক্রয় করেছি। চাহিদা অনুযায়ী ইলিশ ঘাটে না আসায় দাম চড়া।
ইলিশ ব্যবসায়ী ইকবাল হোসেন বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার মাছঘাটের চিত্র পুরো ভিন্ন। এ বছর ঘাটে তেমন মাছই নেই। আজকের বাজারে এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে তিন হাজারে। সরবরাহ না বাড়লে দাম কমার সম্ভাবনা নেই।
আরেক ইলিশ বিক্রেতা নজরুল ইসলাম বলেন, দুই মাস নিষেধাজ্ঞার পর আজ ইলিশের প্রথম বাজার। আজকে সে পরিমাণ মাছ আমদানি হওয়ার কথা সেই পরিমাণ আমদানি হয় নাই। তুলনামূলক মাছের অনেক দাম বেশি। আজকে ১ কেজি সাইজের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার টাকায়, ৭০০ থেকে ৯০০ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২৬০০ টাকায়, ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৭০০ থেকে ১৮০০ কেজি টাকায়। সামনে যদি মাছের আমদানি হয় তাহলে দাম কমবে।
চাঁদপুর মাছ ঘাটের আড়তদার ওমর ফারুক বলেন, অল্প কিছু মাছ এসেছে। মাছের দাম বেশি হওয়ায় বেচাকেনা করতে পারছি না। চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শবে বরাত সরকার বলেন, এ মৌসুমে ইলিশ কম পাওয়া যায়। নদীতে পানি কম। যার কারণে ইলিশের সরবরাহ কমতে পারে। তবে সামনে নদীর পানি বৃদ্ধি ও বৃষ্টিপাত হলে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ পাওয়া যাবে।