শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ০৩:৩১ অপরাহ্ন

ইসলামে শ্রমিকের মর্যাদা ও শ্রমিকের অধিকার

আলোকিত স্বপ্নের বিডি
  • প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার, ১ মে, ২০২৫

ইসলামের একটি প্রধান শিক্ষা হলো ইনসাফ। অন্যের প্রতি অন্যায় করে, অন্যকে ঠকিয়ে কেউ ভালো মুসলমান হতে পারে না। কোরআনে আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়াতাআলা আদল ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দিয়ে বলেন,
اِنَّ اللّٰهَ یَاۡمُرُ بِالۡعَدۡلِ وَ الۡاِحۡسَانِ وَ اِیۡتَآیِٔ ذِی الۡقُرۡبٰی وَ یَنۡهٰی عَنِ الۡفَحۡشَآءِ وَ الۡمُنۡکَرِ وَ الۡبَغۡیِ یَعِظُکُمۡ لَعَلَّکُمۡ تَذَکَّرُوۡنَ
নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফ, সদাচার ও নিকট আত্মীয়দের দান করার আদেশ দেন এবং তিনি আশ্লীলতা, মন্দ কাজ ও সীমালঙ্ঘন থেকে নিষেধ করেন। তিনি তোমাদেরকে উপদেশ দেন, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর। (সুরা নাহল: ৯০)
জুলুমের বিরুদ্ধে শোষিত ও মজলুম মানুষের পক্ষে ইসলামের অবস্থান অত্যন্ত বলিষ্ঠ। কাউকে দিয়ে কাজ করিয়ে মজুরি পরিশোধ না করা জুলুম। কেউ এ ধরনের জুলুম করলে মুসলিম সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব তার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো, তাকে মজুরি পরিশোধ করতে বাধ্য করা।
যদি দুনিয়াতে কোনো কারণে সে পার পেয়েও যায়, পরকালীন কঠিন শাস্তি থেকে সে রেহাই পাবে না। হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন কেয়ামতের দিন এ ধরনের জালিমদের বিরুদ্ধে আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়াতাআলা স্বয়ং বাদী হবেন। আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেন,
ثَلَاثَةٌ أَنَا خَصْمُهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ رَجُلٌ أَعْطَى بِـيْ ثُمَّ غَدَرَ وَرَجُلٌ بَاعَ حُرًّا فَأَكَلَ ثَمَنَهُ وَرَجُلٌ اسْتَأْجَرَ أَجِيرًا فَاسْتَوْفَى مِنْهُ وَلَمْ يُعْطِ أَجْرَهُ
কেয়ামতের দিন আমি তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে বাদী হব; প্রথম হল ওই ব্যক্তি যে আমার নামে কিছু দেওয়ার প্রতিশ্রুতি করল অতঃপর তা ভঙ্গ করল। দ্বিতীয় হল ওই ব্যক্তি যে কোন স্বাধীন ব্যক্তিকে বিক্রয় করে তার মূল্য ভক্ষণ করল। আর তৃতীয় হল ওই ব্যক্তি যে কোনো মজুর খাটিয়ে তার কাছ থেকে পুরোপুরি কাজ নিল অথচ সে তার মজুরী পূর্ণরূপে আদায় করল না। (সহিহ বুখারি: ২২২৭)
এ ছাড়াও বিভিন্ন হাদিসে শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি যথাযথভাবে পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছেন আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। শ্রমিকের কাজ শেষ হওয়ার পরপরই কোনো রকম গড়িমসি না করে মজুরি পরিশোধের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
أَعْطُوا الأَجِيرَ أَجْرَهُ قَبْلَ أَنْ يَجِفَّ عَرَقُهُ
শ্রমিকের শরীরের ঘাম শুকাবার পূর্বে তার মজুরি দিয়ে দাও। (সুনানে ইবনে মাজাহ: ২৪৪৩)
আরেকটি হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
منِ اسْتَأجر أجيراً فَلْيُسَلِّمْ لَهُ أَجرَتَهُ
যে ব্যক্তি কোনো শ্রমিককে কাজে লাগাবে, সে যেন তাঁর পারিশ্রমিক নির্ধারণ করে কাজে লাগায়। (বুলুগুল মারাম: ৯১৪)
শ্রমিকের মজুরি বান্দার হক। তাই শ্রমিককে ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত করলে পরবর্তীতে সেজন্য শুধু আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করলে হবে না। শুধু তওবার মাধ্যমে এ সব অন্যায় মাফ হয় না। বরং ভুল বুঝতে পারলে ওই শ্রমিককে বা তার উত্তরাধিকারীদের খুঁজে বের করে পাওনা পরিশোধ করতে হবে। অন্যথায় কেয়ামতের দিন নিজের সওয়াব দিয়ে বা অন্যের পাপের বোঝা নিয়ে এ রকম পাওনা পরিশোধ করতে হবে। রাসুল (সা.) বলেন,
مَن كانَتْ عِنْدَهُ مَظْلِمَةٌ لأخِيهِ فَلْيَتَحَلَّلْهُ مِنْها، فإنَّه ليسَ ثَمَّ دِينارٌ ولا دِرْهَمٌ، مِن قَبْلِ أنْ يُؤْخَذَ لأخِيهِ مِن حَسَناتِهِ، فإنْ لَمْ يَكُنْ له حَسَناتٌ أُخِذَ مِن سَيِّئاتِ أخِيهِ فَطُرِحَتْ عليه
কারো উপর তার ভাইয়ের কোনো দাবি থাকলে সে যেন তা থেকে মুক্ত হয়। কারণ কেয়ামতের দিন পাওনা পরিশোধের জন্য টাকা-পয়সা থাকবে না। তখন অন্যায়ের সমপরিমাণ সওয়াব পাওনাদারের জন্য নিয়ে নেওয়া হবে। সওয়াব না থাকলে পাওনাদারের গুনাহগুলো তার উপরে চাপিয়ে দেওয়া হবে। (সহিহ বুখারি ৬৫৩৪)

আপনার মন্তব্য লিখুন

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ
  • © All rights reserved © 2019 alokitoswapner-bd.com - It is illegal to use this website without permission.
Design & Developed by Freelancer Zone
themesba-lates1749691102