মালদ্বীপের সদ্যনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জুকে ক্ষমতাচ্যুত করার পরিকল্পনায় ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং (র)-এর জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট-এর এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ‘র’-এর নির্দেশে কিছু এজেন্ট মালদ্বীপের বিরোধী নেতাদের সঙ্গে গোপন আলোচনা শুরু করে। লক্ষ্য ছিল প্রেসিডেন্ট মুইজ্জুকে অভিশংসনের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করা। এ পরিকল্পনায় ৪০ জন সংসদ সদস্য, উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা, এবং প্রভাবশালী অপরাধী গ্যাংয়ের সদস্যদের ঘুষ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়।
‘ডেমোক্র্যাটিক রিনিউয়াল ইনিশিয়েটিভ’ নামে একটি গোপন নথি অনুসারে, অভিশংসন কার্যকর করার জন্য ষড়যন্ত্রকারীরা ৮৭ মিলিয়ন মালদ্বীপীয় রুপিয়া (প্রায় ৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) দাবি করেন, যা ভারতের কাছ থেকে সংগ্রহের পরিকল্পনা ছিল।
এক মাসের আলোচনা সত্ত্বেও অভিশংসনের জন্য প্রয়োজনীয় সমর্থন জোগাড় করতে ষড়যন্ত্রকারীরা ব্যর্থ হয়। ভারতও সরাসরি এই উদ্যোগে অর্থায়ন বা সমর্থন প্রদান করেনি।
ওয়াশিংটন পোস্ট জানায়, ভারত দীর্ঘদিন ধরে মালদ্বীপের প্রধান বিরোধী দল, মালদ্বীপিয়ান ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এমডিপি)-কে শক্তিশালী করতে কাজ করছে। কারণ, চীন প্রেসিডেন্ট মুইজ্জু এবং তার মেন্টর সাবেক প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ ইয়ামিনের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করেছে।
ষড়যন্ত্রের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয় প্রাক্তন ভারতীয় পুলিশ কর্মকর্তা শিরিশ থোরাট এবং বিজেপির সাবেক মুখপাত্র সাভিও রদ্রিগেজের নাম। তারা নাশিদের সময়কালীন মালদ্বীপে ভারতের প্রভাব বাড়াতে সহায়তা করেছিলেন।
মুইজ্জুর পরিবারের একজন উপদেষ্টা ‘র’-এর এক কর্মকর্তার ফোনকল ও বৈঠকের রেকর্ড ওয়াশিংটন পোস্টকে সরবরাহ করেন। যদিও তিনি রেকর্ডগুলো কীভাবে সংগ্রহ করেছেন, তা পরিষ্কার করেননি।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। থোরাট ও রদ্রিগেজ ষড়যন্ত্রের অস্তিত্ব নিশ্চিত করলেও দাবি করেন, তারা সরাসরি ভারত সরকারের হয়ে কাজ করেননি।
তবে ‘র’-এর জড়িত থাকা বা ভারত সরকারের উচ্চপর্যায়ের অনুমোদনের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এই প্রতিবেদনের পর মালদ্বীপ ও ভারতের মধ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চীন ও ভারতের প্রভাব বিস্তারের লড়াইয়ে মালদ্বীপ একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। প্রেসিডেন্ট মুইজ্জুর সরকার এখন এই পরিস্থিতি কীভাবে সামাল দেয়, তা নিয়েই বিশ্বজুড়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে।