ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলায় “আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ” এবং “বেগম রোকেয়া দিবসে” র আয়োজনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয় । ‘জয়ীতা অন্বেষণে বাংলাদেশ’ বেগম রোকেয়া দিবস পালিত – ৪ নারী পেলেন শ্রেষ্ঠ জয়িতা’ সম্মাননা।
যদিও পাঁচটি ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠ জয়িতা সম্মাননা প্রদান করার উদ্দেশ্য ছিলো। এখানে নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন যে নারী, এমন নারী মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর জয়ীতা অন্বেষণে কাউকে না পেয়ে, শ্রেষ্ঠ জয়িতা নির্বাচন করতে পারে নি, এসমনটাই জানান সুলতানা বেগম আকন্দ।
সোমবার (৯ ডিসেম্বর) সকাল ১০ টায় উপজেলা হল রুমে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সমাজের সকল বাধা বিপত্তি দূর করে জীবন সংগ্রামে জয়ী হয়েছেন যে নারী তিনি’-ই’ হচ্ছেন জয়িতা। জীবন যুদ্ধে জয়ী নারীর প্রতীকী নাম “জয়িতা “।
কেবল নিজের অদম্য ইচ্ছাকে সম্বল করে চরম প্রতিকূলতাকে জয় করে জয়িতারা তৃণমূল থেকে সবার অলক্ষ্যে সমাজে নিজের জন্য জায়গা করে নিয়েছেন বা নিতে পারেন, মূলত তারাই হলো ” জয়িতা ”।
পর্যায়ক্রমে ইউনিয়ন ও উপজেলায় জয়িতা বাছাই কাজটি পরিচালিত হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বাছাইয়ের কাজে সম্পৃক্ত ছিলেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজনীন সুলতানার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন মহিলা বিষয়ক সম্পাদক সুলতানা বেগম আকন্দ।
তিনি বলেন,জয়িতারা বাংলাদেশের বাতিঘর।জয়িতাদের দেখে অন্য নারীরা অনুপ্রাণিত হলে ঘরে ঘরে জয়িতা সৃষ্টি হবে। আর তা হলেই বাংলাদেশ তার গন্তব্যে পৌঁছে যাবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজনীন সুলতানা বলেন, সমাজের অর্ধেক জনগোষ্ঠী হচ্ছে নারী। আর নারীদের বাদ দিয়ে উন্নয়ন সম্ভব নয়। নারীরা অধিকার নিশ্চিত করেছেন। স্বাধীনতা সংগ্রামে নির্যাতিত নারীদের বীরাঙ্গনা উপাধি দিয়ে সংবিধানের মাধ্যমে নারীদের অধিকার নিশ্চিত করেছেন। নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে রোল মডেল। সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষে।
এসময় বিশেষ অতিথি হয়ে বক্তব্য রাখেন, স্থানীয় নেতৃবৃন্দ, মুক্তিযুদ্ধা, সাংবাদিক, শিক্ষকসমাজ, সমাজ সেবক, ছাত্র সম্বয়ক। তারা সবাই তাদের অনুমতির কথা গুলি প্রকাশ করেছেন আলোচনা সভায়।
আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে ‘জয়ীতা অন্বেষণে বাংলাদেশ’ তারাকান্দার – ৪ নারী মাঝে শ্রেষ্ঠ জয়িতা’ সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে।
যারা শ্রেষ্ঠ জয়িতা হয়েছেন,তারা হলেন-(১)অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী মোছাঃ শাহনাজ পারভীন। (২)শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী উম্মে হাবিবা, (৩) সফল জননী নারী হিসেবে জাহানারা বেগম ও (৪) সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখায় মোছাঃ রাজিয়া সুলতানা।
তারা সবাই তাদের ব্যক্তি জীবনের অনুমতি প্রকাশ করছেন অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ দিক গুলি নিয়ে।
কারো অশ্রুশিক্ত কণ্ঠে, কারো বা সুখের নানা দিক তুলে ধরেন আলোচনা সভায়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার ভুমি সৈয়দা তামান্না হুরায়রা,কৃষি কর্মকর্তা অনুরমা কাঞ্চি সুপ্রভা শাওন, প্রানিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মাহাবুবুল আলম,প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জীবন আরা বেগম, সমবায় কর্মকর্তা আঃ গফুর, বীরমুক্তিযোদ্ধা আবুল কাসেম, আব্দুল মোতালেব,বিভিন্ন বিদ্যালয়ের প্রধান গনসহ নানা শ্রেণী পেশার মানুষ।
এখানে উল্লেখ যে, নারীর অধিকার আন্দোলন ও নারী জাগরণের অন্যতম পথিকৃৎ বেগম রোকেয়া। মুক্তচিন্তা, ধর্মনিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গির জন্য বিরল ব্যক্তিত্ব হিসেবে বাংলাদেশে স্মরণীয় হয়ে আছেন। ১৯০৯ সালে তিনি ভাগলপুরে ‘সাখাওয়াৎ মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল’ নামে একটি স্কুল স্থাপন করেন। তার অক্লান্ত প্রচেষ্টায় ১৯১৭ সালে এই স্কুল ইংরেজি গার্লস স্কুলে এবং ১৯৩১ সালে উচ্চ ইংরেজি গার্লস স্কুলে রূপান্তরিত হয়। কিন্তু পারিবারিক কারণে রোকেয়া ভাগলপুর ছেড়ে কলকাতায় এসে বসবাস শুরু করেন।
বেগম রোকেয়া ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর রংপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। আর মাত্র ৫২ বছর বয়সে ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর কলকাতায় তার মৃত্যু হয়। তার জন্ম ও মৃত্যুর দিনটি রোকেয়া দিবস হিসেবে পালন করে বাংলাদেশ।
বাঙালি মুসলমান সমাজে নারী স্বাধীনতার পক্ষে প্রথম প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর বেগম রোকেয়া বিশ শতকের প্রথম দিকে বাঙালি মুসলমানদের নবজাগরণের সূচনায় প্রধান নেতৃত্বে ছিলেন। বাঙালি মুসলিম সমাজে পুরুষের পাশাপাশি নারীর সমান অধিকার এবং নারী স্বাধীনতার পক্ষে নিজের মতবাদ প্রচার করেন।
বেগম রোকেয়ার উল্লেখযোগ্য রচনার মধ্যে রয়েছে- মতিচূর, সুলতানার স্বপ্ন, পদ্মরাগ, অবরোধবাসিনী প্রভৃতি।