সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:০৪ অপরাহ্ন

মানসম্মত আলু বীজ উৎপাদনে নীলফামারীর ডোমার বিএডিসি খামার।

জাহিদ হাসান লাবু, স্টাফ রিপোর্টার।
  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৩

মানসম্মত আলু বীজ উৎপাদনে নীলফামারীর ডোমার বিএডিসি খামার।

 

নীলফামারীতে ডোমার খামারটি ১৯৫৭-৫৮ সালে হুকুম দখলের মাধ্যমে সরকার প্রতিষ্ঠা করা হয়। তৎকালীন কৃষি বিভাগের তত্ত্বাবধানে খামারের কার্যক্রম শুরু হয়ে বীজআলু উৎপাদনে অধিক উপযোগী মনে করে ১৯৮৯-৯০ সনে খামারটি আলুবীজ বিভাগে অন্তর্ভুক্ত হয়। যার পরিধি বর্তমানে ৫১৪.৪৮ একর।

নীলফামারীর সোনারায় বিএডিসি’র ডোমার ভিত্তি বীজআলু উৎপাদন খামারের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. আবু তালেব মিঞা এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানান, ডোমার ভিত্তি বীজআলু উৎপাদন খামারটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ একটি খামার। এই খামারের ৫১৪.৪৮ একর বীজ উৎপাদনের জমি ছাড়াও দুইটি পটেটো টিস্যুকালচার ল্যাবরেটরীতে প্রতিবছর ১৫-১৮টি জাতের প্রায় ১২ লক্ষ ভাইরাসমুক্ত প্লান্টলেট উৎপাদন করে তা হতে পরবর্তীতে মিনিটিউবার, ব্রিডার ও ভিত্তি মানের বীজ উৎপাদন করে অত্র দপ্তরের দু’টি হিমাগারে সংরক্ষণ শেষে দেশের বিভিন্ন জেলায় অবস্থিত বিএডিসি’র ২৮টি হিমাগার জোনের চুক্তিবদ্ধ চাষী দ্বারা প্রত্যায়িত বীজ উৎপাদন করে প্রতিবছর প্রায় ৪০,০০০ মে. টন বীজআলু চাষী পর্যায়ে বিপণন করা হয়।

২০২২-২৩ উৎপাদন মৌসুমে বিভিন্ন জাতের প্লান্টলেট হতে মিনিটিউবার ১৭.৫২ একর, মিনিটিউবার হতে প্রাকভিত্তি ১১৩.৮৮ একর, প্রাকভিত্তি হতে ভিত্তি ৬৫.৫০ একর, আমদানিকৃত বেসিক বীজ হতে ভিত্তি ১১৭.৪৫ একরসহ সর্বমোট ৩৮০.৩৫ একর জমিতে বীজআলু উৎপাদন কর্মসূচি ছিল। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২১৫২.৮৯ মে.টন। কর্মসূচির বিপরীতে চলতি উৎপাদন মৌসুমে মিনিটউবার ৭০.৯২ মে.টন, প্রাকভিত্তি ৬৮১.৫০ মে.টন সহ সর্বমোট ২৩০১.৭২ মে.টন বীজআলু উৎপাদিত হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৪৮.৮৩ মে.টন বেশি।

ইতোপূর্বে ২০২১-২২ মৌসুমে বিএডিসি কর্তৃক ১০টি নতুন জাতের বীজআলু নিবন্ধন করা হয়েছে যেগুলো হলোঃ বিএডিসি আলু-১ (সানশাইন), বিএডিসি আলু-২ (প্রাডা), বিএডিসি আলু-৩ (সান্তানা), বিএডিসি আলু-৪ (ইনোভেটর), বিএডিসি আলু-৫ (এডিসন), বিএডিসি আলু-৬ (কুম্বিকা), বিএডিসি আলু-৭ (কুইনঅ্যানি), বিএডিসি আলু-৮ (ল্যাবেলা), বিএডিসি আলু-৯ (কেএসি-৮১), বিএডিসি আলু-১০ (অ্যালকেন্ডার)। ২০২২-২৩ মৌসুমে বিএডিসি কর্তৃক আরও ৪টি জাতের বীজআলু নিবন্ধন করা হয়েছে যেগুলো হলোঃ বিএডিসি আলু-১১ (ডেলিয়ারেড), বিএডিসি আলু-১২ (রাশিদা), বিএডিসি আলু-১৩ (জিনারেড), বিএডিসি আলু-১৪ (এসএইচসি ১০১০)। বিগত ৩ বছর যাবত ৮টি (প্রাডা, সানশাইন, সানতানা, কুইন অ্যানি, ৭ ফোর ৭, প্রিমাভেরা, হার্মোসা, টুইনার) আগাম জাতের গবেষণামুলক কার্যক্রমের ফলাফলের ভিত্তিতে ৭ ফোর ৭, সানশাইন, কুইন অ্যানি এবং প্রাডা এই ৪টি জাত কৃষক পর্যায়ে আগাম আলু হিসেবে চাষাবাদ করার জন্য সুপারিশ করা হয়। এছাড়াও শিল্পে ব্যবহার, রপ্তানি উপযোগী এবং উচ্চফলনশীল জাতের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ২০২২-২৩ উৎপাদন মৌসুমে আমদানিকৃত উৎসের আলুর জাত উপযোগীতা ও নতুন জাত অবমুক্তর জন্য ৬টি জাতের পরীক্ষামূলক প্লট স্থাপন করা হয়। পরীক্ষামুলক জাতগুলো হলোঃ ১. VR-808 ২. STT-12-873 ৩. এসএইচসি- ১০১০ ৪. ব্রিয়ান্না ৫. লুগানো ৬. লিওনাটা

২০২২-২৩ উৎপাদন মৌসুমে আগাম জাতের আলুর উপযোগীতা যাচাইয়ের জন্য পরীক্ষামূলক প্লট স্থাপন করা হয়।

পরীক্ষামুলক জাতগুলো হলোঃ 1. Vogue, 2. Beyonce 3. Nubila 4.7(Kishorgonj) 5. Sunshine 6. Granola 7. Alouette 8. Ranomi। এছাড়াও চলতি উৎপাদন মৌসুমে ৪৪টি জাতের জাত উপযোগীতা যাচাইয়ের জন্য প্লট স্থাপন করা হয়েছে।

বীজআলুর নতুন নতুন সম্ভাবনাময় জাতগুলোর অভিযোজন ক্ষমতা ও গবেষণার মাত্রা সম্প্রসারণ এবং জার্মপ্লাজম সংরক্ষণের জন্য প্রায় ১.০০ একর জমিতে ৮০টি জাতের একটি জীবন্ত জাদুঘর প্রতি বছর স্থাপন করা হয়।

বীজআলু চাষের উপযোগী জমির মধ্যে বীজআলু উৎপাদনের পর অবশিষ্ট অপেক্ষাকৃত কম উর্বর জমিতে ২০২২-২৩ উৎপাদন মৌসুমে ২০.০০ একর জমিতে গমবীজ উৎপাদন করা হয়েছে। ২৪ মে.টন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে অর্জন ২৬.২ মে.টন। এছাড়াও বোরো মৌসুমে ব্রিধান৯২ জাতের ৪০.০০ একর এবং ব্রিধান৮৮ জাতের ২০.০০ একরসহ সর্বমোট ৬০.০০ একর জমিতে ভিত্তি মানের বোরো ধানবীজ উৎপাদন করা হয়েছে। বোরো বীজ উৎপাদনের পর অপেক্ষাকৃত উঁচু জমিতে আমন মৌসুমে আমন বীজ উৎপাদন করা হয়।

চলতি বীজআলু উৎপাদন মৌসুমে প্লান্টলেট হতে মিনিটিউবার
২১ একর, মিনিটিউবার হতে প্রাকভিত্তি ১৭০.২৭ একর, প্রাকভিত্তি হতে ভিত্তি ২৫১.৫২ একর এবং অন্যান্য ১৩.০০ একরসহ সর্বমোট ৪৫৫.৭৯ একর জমিতে বীজআলু উৎপাদন কর্মসূচি রয়েছে। বর্তমানে জমি প্রস্তুত এবং রোপণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

বর্তমানে খামার শতভাগ যান্ত্রিকীকরণের আওতায় চলমান বীজ উৎপাদন কার্যক্রমে পটেটো প্লান্টার দ্বারা বীজআলু রোপণ করে পটেটো ডিগার/হার্ভেস্টার দ্বারা বীজআলু সংগ্রহ শেষে পটেটো গ্রেডার মেশিন দ্বারা বীজআলু যথাযথভাবে গ্রেডিং করে হিমাগারে সংরক্ষণ করা হয়।

উল্লেখ্য যে, ২০২০-২১ হতে প্রতি উৎপাদন মৌসুমে বীজআলু উত্তোলনের পর জমির উর্বরতা বৃদ্ধি, সুষম পুষ্টির যোগান, ভুমি ক্ষয়রোধ এবং আবাদি জমির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ৪৫০ একর জমিতে সবুজ সার হিসেবে ধৈঞ্চা চাষ করা হচ্ছে। এছাড়া খামারে নিজস্ব প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভার্মিকম্পোষ্ট প্ল্যান্ট তৈরী
করা হয়েছে। যা থেকে প্রতিবছর প্রায় ৩০ মে.টন ভার্মিকম্পোস্ট উৎপাদন করা হয়।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতি ইঞ্চি জমিকে উৎপাদনের আওতায় এনে অত্র খামারটি জাতীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বিশ্বায়নের এই যুগে কৃষিই হোক দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। এরই ধারাবাহিকতায় কাজ করে যাচ্ছে বিএডিসি’র অন্যতম বীজআলু উৎপাদন খামার, ডোমার ভিত্তি বীজআলু উৎপাদন খামার, সোনারায়, নীলফামারী।

আপনার মন্তব্য লিখুন

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ
  • © All rights reserved © 2019 alokitoswapner-bd.com - It is illegal to use this website without permission.
Design & Developed by Freelancer Zone
themesba-lates1749691102