সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:০৪ অপরাহ্ন

অগ্নিদগ্ধ কারখানা যেন ভুতের বাড়ি।

আলোকিত স্বপ্নের বিডি
  • প্রকাশের সময় : রবিবার, ১৮ জুলাই, ২০২১

অগ্নিদগ্ধ কারখানা যেন ভুতের বাড়ি/সেজান জুস কারখানায় এখন সুনশান নীরবতা/ আগুনে পোড়া কারখানায় পোড়া মানুষের গন্ধ/ কারখানার ভেতরে এখনও পোড়া হাড্ডি/ সেজান জুসে সন্ধ্যায় প্রেতাত্মা ঘুরে বেড়ায়।

 

নারায়ণ সরকার,  রূপগঞ্জ প্রতিনিধিঃ

 

 

 

 

 

 

কারখানার ভবনে এখনও পড়ে আছে শ্রমিকের পোড়া হাড় । হাশেম ফুড কারখানার অগ্নিদগ্ধ ৬তলা ভবনের নীচতলা থেকে উপর প্রতিটি তলা ফ্লোরে ছড়িয়ে পড়ে আছে ভাঙ্গা টাইলস আর ছাদ পুড়ে ধ্বসে পড়া রাব। ফ্লোর জুড়ে পোড়া যন্ত্রাংশ আর মালামাল। সবখানেই স্যাঁতস্যাঁতে পানি। উৎকট পোড়া কটু গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে চারপাশে। ভবনের যেখানে আগুনে পোড়া অঙ্গার হয়ে গেছে ৪৯টি তাজা প্রাণ সেই চারতলায় মেঝের পানিতে ভাসতে ক্যামিকেলের আবরণ। নিশব্দ ভবনের বিভিন্ন তলা থেকে বাতাসের ঝটকায় হঠাৎ কাঁচের টুকরো ঝড়ে পরার শব্দ যেনো জানিয়ে যায় এতো শব্দহীন ছিল না কোন কালে এই ভবনটি।
কর্তব্যরত এক নিরাপত্তকর্মী জানালেন, পরির্দশন দল, গণমাধ্যম কর্মী, ফায়ার সার্ভিস কিংবা আইন প্রশাসনের লোকজন আসে মাঝে মধ্যে। এছাড়া এলাকার এখন আর কেউ আসেন না। এখন রাত হলে ভূতুরে পরিবেশ বিরাজ করে এ ভবনে। ঝরা কাঁচ কিংবা ছাদের বালুর রাব ধসে পরার শব্দ তখন পিলে চমকে দেয় দায়িত্বরত প্রহরীর
অগ্নিদগ্ধ সেজান জুস কারখানায় এখন নেই আগের সেই কর্মচাঞ্চল্ল। যেখানে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলত কর্মযজ্ঞ, সেখানে এখন সুনশান নীরবতা। সন্ধ্যা নামলে কারখানার ভিতরে ভুতুরে পরিবেশ বিরাজ করে। মাঝে মধ্যে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা পরিদর্শনে আসেন। এছাড়া মিডিয়াকর্মীরাও যান সময় করে। তাছাড়া সারাদিন ওই কারখানার কাছেও ঘেঁষেন না কেউ।
লাশের পরিসংখ্যান নিয়েও ধু¤্রজাল তৈরি হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস দাবি তুলেছেন ৪৯টি পোড়া মৃতদেহ উদ্ধার করেছেন তারা আবার পুলিশ মামলায় লিখেছেন ৪৮ জনের উদ্ধারের কথা। এদিকে নিখোঁজ কতজনের দাবি করা হয়েছে তার হিসেবও জানাতে পারেননি সংশ্লিষ্ট কেউ।।
রূপগঞ্জে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় পুলিশের করা মামলার তদন্তে সিআইডির হাতে। অগ্নিকান্ডের ঘটনায় একটি হত্যা ভুলতা ফাড়ির ইনচার্জ নাজিমউদ্দিন বাদী হয়ে কারখানার চেয়ারম্যান মো. আবুল হাশেমসহ ৮ জনের নামে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে।
এদিকে দায়িত্ব হাতে নিয়েই কারখানা পরিদর্শনে এসে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাশেম ফুডস লিমিটেড নামক কারখানায় অগ্নিকান্ডের ঘটনায় গুরুত্বপূর্ণ কিছু আলামত সংগ্রহ করেছে ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি)। শনিবার দুপুর ১২টার দিকে সংস্থাটির অতিরিক্ত উপ মহাপরিদর্শক ইমাম হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
ইমাম হোসেন বলেন, তদন্ত কাজ শেষ হলে যথাশিগশিরই সম্ভব প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। প্রাথমিক পরিদর্শন শেষে দশটি পয়েন্টে তদন্তকারী কর্মকর্তাকে নোট করে দিয়েছি। এই পয়েন্টগুলো ধরে তিনি কাজ করবেন। আশা করছি খুব শিগগিরই আগুন কিভাবে লাগলো আগুনের সূত্রপাত কি সব বেরিয়ে আসবে।
আগুনের ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা হত্যা মামলায় ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়। আদালতের মাধ্যমে তাদের ৪ দিনের রিমান্ডে নিয়ে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। রিমান্ড শেষে আদালত আবুল হাশেমের ২ ছেলেকে জামিন দিয়েছে। কারখানার মালিক আবুল হাশেমসহ বাকি ৬ জন বর্তমানে কারাগারে রয়েছে।
গত শনিবার কারখানা পরিদর্শনে আসেন সিআইডি, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তর পরিদর্শন, নাগরিক তদন্ত কমিটি ও ফায়ার সার্ভিসের নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলের একটি দল। এ কারণে সেখানে ভীড় করেন গণমাধ্যম কর্মীরাও। পরিদর্শনে গিয়ে কর্তাদের নজর এড়িয়ে গেলেও কয়েকজন গণমাধ্যম কর্মীর নজর এড়ায়নি কোন পোড়া লাশের পাজরের হাড় আর পোড়া কাপড়সহ দেহের ধ্বংসাবশেষ। ছবি তুলতে কাছে এগিয়ে যেতেই মানুষের পচে যাওয়া দূর্গন্ধে নাড়ী উল্টে আসার উপক্রম।
জানা যায়, হাড় পরে থাকা চারতলার এই অংশটিতে নারীদের পোশাক পরিবর্তন করার জন্য একটি ছোট কামরা ছিল। পুড়ে যাওয়া কাপড়চোপড় দেখে ধারনা হচ্ছে এটি হয়তো কোন নারীর মাজার হাড়ের অংশ বিশেষ। এদিকে নাগরিক তদন্ত কমিটির লোকজনও মৃতের সঠিক সংখ্যা নিয়ে সন্দিহান প্রকাশ করেছেন। তারাও খুঁজে পেয়েছেন আরেক টুকরো হাড়। এ অবস্থায় আসলে কতগুলো প্রাণহানী ঘটেছে অভিশপ্ত হাসেম ফুডের এই ভবনে তা এখনো নিশ্চিত নয় কোন দপ্তরের।
অগ্নিদগ্ধ ভবনের চারতলায় শ্রমিকের হাড় পাওয়া গেছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স নারায়ণগঞ্জ জেলার উপসহকারী পরিচালক তানহারুল ইসলাম বলেন, ‘আমরাও তদন্ত কমিটির সঙ্গে ভবন পরিদর্শনে ছিলাম। তখন এমন কোনো ঘটনা দেখতে পাইনি। এমন কিছু আছে কিনা তা খুঁজে দেখছি।’
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাশেম ফুডস কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন নাগরিক তদন্ত কমিটির সদস্যরাও। শনিবার দুপুরে নাগরিক তদন্ত কমিটির তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে জাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ সাংবাদিকদের এ এসব কথা জানান।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘আমাদের দেশে অনেক অগ্নিকান্ড হয়। তদন্ত কমিটিও হয়। কিন্তু তদন্তের রিপোর্ট আর প্রকাশ করা হয় না। অগ্নিকান্ডে যেসকল মানুষ মৃত্যুবরণ ও আহত হয় তাদের পরিবার সঠিক ক্ষতিপূরণ ও ভাল কোন ফলাফল পায় না। এসব তদন্ত কমটি গঠন করা হলেও প্রতিবেদন না দেয়া ও দোষী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় না আনায় এরকম দুর্ঘটনা ঘটছে। এজন্য আমরা দেশের সকল কলকারখানাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকদের কথা চিন্তা করে আমাদের দায়িত্বের জায়গা থেকে আমরা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি।’
আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, ১৯ সদস্যবিশিষ্ট এই কমিটি আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন প্রকাশ করবে। অগ্নিকান্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত যে মৃতের সংখ্যা দেখানো হয়েছে তা নিয়ে আমরা সন্দিহান। ওপরের চারতলায় এখনো মানুষের হাড় পাওয়া যাচ্ছে। কেন অগ্নিকান্ড ঘটেছে, কীভাবে ঘটেছে এর সব তথ্য নিয়ে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন তৈরি করবেন বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, ৮ জুলাই বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতা এলাকায় সজীব গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান হাশেম ফুডস কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এতে ৫২ জনের মৃত্যু হয়। অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস, জেলা প্রশাসনসহ একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

আপনার মন্তব্য লিখুন

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ
  • © All rights reserved © 2019 alokitoswapner-bd.com - It is illegal to use this website without permission.
Design & Developed by Freelancer Zone
themesba-lates1749691102