সোমবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:২৩ অপরাহ্ন

করোনার সাথে, বাড়তে পারে ডেঙ্গু মহামারী।

আলোকিত স্বপ্নের বিডি
  • প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার, ৮ জুলাই, ২০২১

গত বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ তেমন না থাকলেও, এ বছর আবারও সংক্রমণের হার বাড়ছে। ২০১৯ সালের পরিস্থিতির সঙ্গে এ বছরের ডেঙ্গু সংক্রমণের তুলনা করা যায়। সে বছর দেশে প্রায় এক লাখেরও বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং মারা গিয়েছিলেন ১৭৯ জন।

২০১৯ সালের মে মাসে দেশে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ছিল মাত্র ১৯৩ জন। পরের মাসেই রোগীর সংখ্যা বেড়ে গিয়ে এক হাজার ৮৮৪ জনে দাঁড়িয়েছিল। এরপর জুলাইতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ১৬ হাজার ২৫৩ হয়েছিল। সে বছর মোট এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন, যা এক বছরে সর্বোচ্চ সংক্রমণ।

চলতি বছরের মে মাসে ৪৩ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (ডিজিএইচএস) তথ্য অনুযায়ী জুনে এই সংখ্যা বেড়ে ২২৫ জনে দাঁড়িয়েছিল।

এ বছর এ পর্যন্ত মোট ৫৬৫ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৩২ জন ঢাকার বাইরের। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত মঙ্গলবার সকাল থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় ২৯ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

গতকাল সন্ধ্যায় এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যে ডেঙ্গু আক্রান্ত মারা যাওয়ার সংখ্যা হালনাগাদ করা হয়নি। তবে, পরিবারের সদস্যদের বরাতে একজনের মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে ১৩১ জনের চিকিৎসা চলছে ও ৪৩৪ জন সুস্থ হয়েছেন।

এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে আনতে সব ধরণের ব্যবস্থা নেওয়া না হলে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়বে এবং তা করোনা মহামারির কারণে ইতোমধ্যে বিপর্যস্ত হওয়া স্বাস্থ্যখাতকে আরও চাপের মুখে ঠেলে দেবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

তাদের মতে, একইসঙ্গে ডেঙ্গু ও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া অনেক বেশি ঝামেলাপূর্ণ এবং এ কারণে হতাহতের সংখ্যা বেড়ে যেতে পারে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার বলেন, ‘ডেঙ্গু রোগী বাড়ার সুস্পষ্ট লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। যেহেতু করোনা মহামারিও খারাপ দিকে মোড় নিয়েছে, সেক্ষেত্রে বলা যায় সামনে একটি ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।’

তিনি জানান, গত মাসে করা একটি গবেষণায় ঢাকার প্রতিটি ওয়ার্ডে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে বেশি এডিস মশার উপস্থিতি চিহ্নিত করা হয়েছে।

বাশার বলেন, প্রতি এক বছর বাদে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার একটি ধারা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

গত বছর স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এক হাজার ৪০৫ জন ডেঙ্গু রোগী ও ডেঙ্গুতে নয় জনের মৃত্যু নিশ্চিত করেছেন।

‘এই ধারা পর্যালোচনা করে বলা যায়, এ বছর ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে এবং জুনে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সেদিকেই নির্দেশ করছে। যদি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের কোন উপযুক্ত ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে সংক্রমণের হার আগস্ট পর্যন্ত বাড়তে থাকবে’, বলেন কবিরুল বাশার।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকাল কলেজ ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক এইচ এম নাজমুল আহসান বলেন, ‘একইসঙ্গে ডেঙ্গু ও করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা করতে গিয়ে ডাক্তাররা সমস্যায় পড়বেন।’

‘ডেঙ্গু রোগীর শরীরে রক্তপাত হয় এবং করোনা রোগীর দেহে রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা দেখা দেয়। আমরা রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিহত করার জন্য করোনা রোগীদের একটি ইনজেকশন দেই। কিন্তু, যদি একই রোগীর দেহে ডেঙ্গু থাকে এবং তার প্ল্যাটিলেটের সংখ্যা এক লাখের নিচে থাকে, সেক্ষেত্রে তাকে এই ইনজেকশন দেওয়া যায় না,’ বলেন তিনি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা আরও বাড়লে পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করতে সীমিত সংখ্যক চিকিৎসকদের অনেক ঝামেলায় পড়তে হবে।

‘করোনাভাইরাসের কারণে সংক্রামক নয় এরকম রোগের চিকিৎসা ইতোমধ্যে বিঘ্নিত হয়েছে। যদি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায় এবং একই সংখ্যক চিকিৎসক দিয়েই তাদের চিকিৎসা করতে হয়, সেক্ষেত্রে ব্যাপারটি বেশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাবে’, অধ্যাপক খুরশীদ বলেন।

তিনি জানান, ২০১৯ সালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য হাসপাতালে আলাদা ওয়ার্ডের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু, বর্তমানে সে ওয়ার্ডগুলো করোনা রোগীদের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে, জেলা হাসপাতালগুলোকে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার জন্য যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা সব জেলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে সব ধরণের সহায়তার জন্য ডেঙ্গু সেলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেছি।’

গতকাল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাঈদা নাসরিন বাবলি ডেঙ্গুতে মারা যান। তার স্বামী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার জানান, রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে বাবলি চিকিৎসাধীন ছিলেন।

কীটতত্ত্ববিদ ও বাংলাদেশ প্রাণীবিজ্ঞান সমিতির সাবেক সভাপতি মনজুর চৌধুরী বলেন, মানুষকে সচেতন করতে হবে। ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা পরিষ্কার পানিতে বংশবিস্তার করে। সপ্তাহে অন্তত একবার জমে থাকা পানির পাত্র খালি করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, এডিস মশা সাধারণত বর্ষাকালে, মে থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে বংশবিস্তার করে থাকে।

স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক ডা. নাজমুল ইসলাম জানান, তারা ঢাকায় একটি প্রাক-বর্ষা সমীক্ষা চালিয়েছিলেন এবং সেটির ফলাফল ইতোমধ্যে দুটি সিটি করপোরেশনকে জানানো হয়েছে।

তিনি জানান, সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি বাকি সবাইকে তাদের নিজ দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসতে হবে।

‘আমাদেরকে ফুলের টব, ট্রে, প্লাস্টিকের পাত্র, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র, অব্যবহৃত কমোড এবং অন্যান্য উৎস, যেখানে পরিষ্কার পানি জমে থাকতে পারে, তা পরিষ্কার রাখতে হবে যেন এডিস মশার প্রজনন না হয়’, বলেন নাজমুল।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তারা নিয়মিত কার্যক্রমের পাশাপাশি ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা হচ্ছে এরকম প্রতিটি হাসপাতালে কীটনাশক স্প্রে করছেন।

তিনি আরও জানান, হাসপাতাল থেকে তথ্য সংগ্রহের পর তারা রোগীদের বাসা ও সংযুক্ত এলাকায় কীটনাশক স্প্রে করছেন।

পূর্ণবয়স্ক মশা ও শূককীট ধ্বংস করার জন্য তারা দুটি ভিন্ন ধরণের কীটনাশক ব্যবহার করছেন।

তিনি সবাইকে সতর্ক থাকার আহবান জানান এবং এডিস মশার সকল সম্ভাব্য প্রজননক্ষেত্র ধ্বংস করার অনুরোধ করেন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) উপপ্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মীর মুস্তাফিজুর রহমান জানান, তারাও এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য একই ধরণের কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন এবং জনসচেতনতা বাড়াতে প্রচারণা চালাচ্ছেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বিভিন্ন সরকারি ভবন, কলোনি ও নির্মাণাধীন ভবনে অভিযান চালাচ্ছি এবং কোথাও ডেঙ্গুর শূককীট পাওয়া গেলে জরিমানা করছি।’

আপনার মন্তব্য লিখুন

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ
  • © All rights reserved © 2019 alokitoswapner-bd.com - It is illegal to use this website without permission.
Design & Developed by Freelancer Zone
themesba-lates1749691102