বরগুনায় প্রতিবন্ধী’র জমি দখল, প্রতিবাদ করায় ধর্ষণ মামলা দেওয়ার হুমকি।
বিশেষ প্রতিনিধিঃ
বরগুনার বেতাগী উপজেলার বেতাগী পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডে জমি বিরোধে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে প্রতিবন্ধীসহ স্থানীয় নিরীহ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মাতৃছায়া জেনারেল হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক আবুল বাশারের স্ত্রী দিয়ে ধর্ষণ মামলা দেয়ার হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে । এছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে প্রসূতি মায়েদের নিজে সিজার করানোসহ একাধিক নানা অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে।
একাধিক ব্যক্তির অভিযোগে জানা গেছে, বরগুনার বেতাগী পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডে বাসস্ট্যান্ডের পূর্বপাশে ২০১৮ সালের মে মাসে সরকারি অনুমোদন বিহীন ‘ মাতৃছায়া জেনারেল হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামে একটি ক্লিনিক গড়ে তোলে।
স্থানীয় কিছু নামধারী আওয়ামী লীগের নেতাদের ছত্রছায়ায় এবং প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তিনি অশিক্ষিত হয়েও হাতুড়ে চিকিৎসক, অদক্ষ নার্স দিয়ে সিজার করছেন। এছাড়া প্রায় সময় পরিচালক আবুল বাশার নিজে সিজার করছে। যখনই আবুল বাশারের বিরুদ্ধি অভিযোগ বা অনিয়মের কথা বলে তখনই স্থানীয় কিছু সুবিধাবাদী আওয়ামী লীগের নেতারা তাঁর পক্ষে এসে কথা বলে।
স্থানীয় ও ভুক্তভোগী পরিবার জানায়, বেতাগী পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডে জমির মালিক মৃত হাতেম আলী সিকদার তাঁর লোকান্তরে দুই পুত্র আতাহার সিকদার ও মোতাহার সিকদার, এক কন্যা মৃত্যু চন্দ্রভানু।
এসব ওয়ারিশ সূত্রে মালিকানা এবং ওই জমিতে বসতবাড়ি নির্মাণ করে। আর্থিক অভাব-অনটন থাকার কারণে বাড়ি ছেড়ে ঢাকায় কর্মস্থল বেছে নেয়। মাঝেমধ্যে বাড়িতে আসেন।
কিছুদিন পূর্বে আতাহার সিকদার এর স্ত্রী হাচনবানু গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁর কন্যা পারুল বেগম বেতাগী মাতৃছায়া ক্লিনিকে নিয়ে যায়। ক্লিনিকের পরিচালক আবুল বাশার রোগী গুরুতর হওয়ায় তাকে তিন মাস ক্লিনিকে থাকতে হবে বলে জানান।
এ সময় আতাহার সিকদারের কন্যা পারুল বেগম মায়ের চিকিৎসার জন্য আবুল বাশারের ক্লিনিকে দ্বারস্থ হলে ভুক্তভোগী পারুলকে অনৈতিক কুপ্রস্তাব দেয় তিনি। পারুল তার প্রস্তাবে রাজি না হলে, তাঁর মাকে চিকিৎসা না দিয়ে অভিযুক্ত আবুল বাশার ১২ দিন পর ক্লিনিক থেকে নাম কেটে দেয়।
পরে পারুলদের পরিবারে প্রতিবন্ধী বাবা ছাড়া সচ্ছল ও দায়িত্ববান কোন ব্যক্তি না থাকায় আবুল বাশার ক্ষিপ্ত হয়ে আতাহারের ভোগ দখলীয় বসতবাড়ি আবুল বাশার ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে জোরপূর্বক দখল নেয় এবং তাদেরকে মারধর করে পারুলকে শ্রীলতাহানি করারর চেষ্টা করে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তিরা জানান, আবুল বাশার দৈনিক বিজয়ের বাণী, বিজয় ৭১টিভির, কথিত সম্পাদক ও প্রকাশক পরিচয় দিয়ে নিরীহ মানুষকে হয়রানিসহ বিভিন্নভাবে চাঁদাবাজি করে যাচ্ছে।
তার উক্ত মিডিয়ায় সরকারি কোনো অনুমোদন আছে কিনা কারো জানা নেই। তবে তাঁর এ ধরণের কার্যকলাপ থেকে মুক্তি চান তারা।
বেতাগী বাসস্ট্যান্ডের হোটেল ব্যবসায়ী শওকত হোসেন জানায়, ‘আবুল বাশার স্থানীয় সুবিধাবাদী নেতা ও থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে বিভিন্ন অপকর্ম করে থাকে।
বাসস্ট্যান্ডের বাসিন্দা বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক ছাত্রনেতা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন,’ বিভিন্ন অবৈধ কর্মকান্ডের সাথে জড়িত আবুল বাশারের আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
একাধিক সচেতন মহল বলছেন, নারী ও শিশু ধর্ষণের ঘটনা বন্ধে সরকার নতুন আইন-প্রণয়ন করে কঠোর শাস্তির বিধান করেছে। কিন্তু সেই আইনকে ‘ফাঁদ’ হিসেবে ব্যবহার করছে কিছু নষ্ট মানুষ, অপরাধের মাধ্যমে আয় রোজগার করছে।
তারা শত্রুকে ফাঁসানো প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে এই আইনকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। তাঁর প্রমাণ আবুল বাশার তার স্ত্রীকে দিয়ে নিরীহ সত্যের পক্ষে কথা বলা ওই এলাকার মো. আব্দুর বাজ্জাক ও স্বাধীন নামের দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দেয়ার জন্য বেতাগী থানায় গিয়েছিল ।
জানা গেছে, ইতিপূর্বে অনেক মানুষকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেছেন এই আবুল বাশার। বর্তমানে প্রতিবন্ধী আতাহারের পৈত্রিক ভোগ দখলীয় সম্পত্তি ও বসত ঘর দখল নেয়। তবে আবুল বাশার জানান, আমিও জমি পাবো এজন্য দখল নিয়েছি।
বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা তেন মং বলেন, ‘ মাতৃছায়া জেলারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক আবুল বাশারের বিরুদ্ধ শিকগিরই আইনগত ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে বেতাগী থানার ওসি ( তদন্ত )আব্দুস সালাম বলেন, ‘ বিষয়টি শুনেছি,জমি জমা বিরোধকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের পাল্টাপাল্টি মৌখিক অভিযোগ হয়েছে। তবে থানায় কোন লিখিত অভিযোগ হয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।