আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি।।বরগুনার আমতলী উপজেলায় গাজীপুর বন্দরের সরকারী পোষ্ট অফিস, পশুহাসপাতাল, ইউনিয়ন ভূমি অফিস ও উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের অনেক পুরনো ভবন ও জায়গা আমতলীর সোনাখালী গ্রামের যুবলীগ নেতা মোঃ সোহেল রানা ও শাহজাহান খানসহ একাধিক ব্যক্তি কর্তৃক জোরপূর্বক দখল চেষ্টার প্রতিবাদে গাজীপুর বন্দরে মানববন্ধন করেছে গাজীপুর বন্দরের শহাস্রাধিক ব্যবসায়ী ও স্থানীয় সাধারণ মানুষেরা।
বাজারের স্থানীয় জনসাধারণের ব্যানারে ব্যবসায়ী মোঃ আজিজুল হক রত্তন মাষ্টার এর সভাপতিত্বে ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচীতে বক্তব্য রাখেন আঠারগাছিয়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি মোঃ সোহেল সালাম মোল্লা, বন্দর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী মোঃ রুহুল আমিন, ইউপি সদস্য হাসনাহেনা, সাবেক ইউপি সদস্য মোঃ নেয়ামত উল্লাহ, ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ জুয়েল গাজী, মোঃ নিজাম উদ্দিনসহ গাজীপুর বাজারের ব্যবসায়ী ও গন্যমান্য ব্যক্তিরা।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, আঠারগাছিয়া ইউনিয়নের সোনাখালী গ্রামের মোঃ ফজলুর রহমান হাওলাদারের পুত্র সাবেক ইউপি সদস্য মোঃ আবুল কালাম ও তার ছোট ভাই যুবলীগের সভাপতি প্রার্থী মোঃ সোহেল রানার নেতৃত্বে গাজীপুর বন্দরে একটি চিহ্নিত ভূমিদস্যু বাহিনী রয়েছে। এ বাহিনীর কাজই হলো ভূয়া ও জাল কাগজপত্র তৈরী করে অন্যের জমি দখল করে সাধারণ মানুষদের হয়রানী করা। ভূমিদস্যু সোহেল রানার বড় ভাই আবুল কালাম ওই ইউপি নিবার্চনে ৬নং ওয়ার্ডে সদস্য পদে অপর সাবেক ইউপি সদস্য নজরুল ইসলামের কারনে পরাজিত হয়। এই পরাজয়ের রেশ ধরে গাজীপুর বন্দরের থাকা সাবেক ইউপি সদস্য নজরুল ইসলামের উপজেলা ভূমি অফিস থেকে বন্দোবস্ত নেয়া জমির ঘরসহ সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে দিনে দুপুরে জোরপূর্বক করে দখল নেয়। যা এখনো ভূমিদস্যু সোহেল রানার অপর ভাই কাওসারের দখলে রয়েছে। তিনি সেখানে মুদি মনোহরি দোকানের ব্যবসা করেন। শুধু জোরপূর্বক জমি দখল নয় মারামারি, ছিনতাই, মানুষকে ভয়ভীতি দেখানো ও ধান কেঁটে নেয়াসহ একাধিক বিষয়ে সোহেল রানাসহ তার ভাইদের বিরুদ্ধে আমতলী ও গলাচিপা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে বিভিন্ন ধারায় ৬টি মামলা ও উভয় থানায় একাধিক সাধারণ ডায়েরী রয়েছে।
এছাড়া পল্লীবিদ্যুতের সংযোগ পাইয়ে দেয়ার নাম করে পশ্চিম সোনাখালী গ্রামের ৪০৬ জন গ্রাহকদের কাছ অবৈধভাবে জনপ্রতি ১৫০০ টাকা উত্তোলন করেছেন এই ভূমিদস্যু সোহেল রানা। বিদ্যুৎ দেয়ার নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা উঠানোর বিষয়টি প্রমানিত হওয়ায় গত বছরের ১৫ মে সোহেল রানার বিরুদ্ধে আমতলী থানায় এফ.আই.আর নেওয়ার জন্য পটুয়াখালী পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি’র এজিএম (প্রশাসন) মোঃ জাহিদুল হাসান লিখিত আবেদন করেন।
ভূমিদস্যু সোহেল ও তার ভাই সাবেক ইউপি সদস্য আবুল কালাম সবচেয়ে ন্যাকারজনক ঘটনা ঘটায় গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর। আমতলীর গাজীপুর বন্দর ও গলাচিপার বড়গাবুয়া আন্তঃজেলা খেয়াঘাটের ইজারা না পেয়ে ওই দিন সোহেল রানা ও তার ভাই আবুল কালাম সে সময়ের খেয়াঘাট ইজারাদার জসিম আকনকে চরপাড়া কালামের দোকানের সামনে ডেকে এনে মারধোর করে তার পকেটে থাকা ৭৮ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে মুখমন্ডলে আলকাতরা মেখে দেয়। সেই ঘটনায় ইজারাদার জসিম আকন বাদী হয়ে পার্শ্ববতর্ী গলাচিপা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে সোহেল রানা ও আবুল কালামসহ অপর সকল ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় আবুল কালাম অনেক দিন জেল হাজতে ছিলেন।
মানববন্ধনে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি সোহেল সালাম সালাম মোল্লা বলেন, এই ভূমিদস্যু সোহেল রানা ও তার ভাই কালামসহ অপর ভাইদের বিরুদ্ধে গাজীপুর বন্দরের সরকারী পোষ্ট অফিস. পশুহাসপাতাল, ইউনিয়ন ভূমি অফিস ও উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের অনেক পুরনো ভবন ও সম্পত্তি দখলের অভিযোগ রয়েছে। তিনি আরো বলেন, ওই ভবনের সামনের জায়গায় গাজীপুর বন্দরের সকল ছোট বড় অনুষ্ঠান, মাহফিল, সভা- সমাবেশ দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। সম্প্রতি চিহ্নিত ভূমিদস্যু সোহেল রানা ও তার ভাই আবুল কালামসহ অপর ভূমিদস্যুরা উক্ত সম্পতি দখল করার পায়তারা করেছেন। আমরা আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নবাসী এ ভূমি দখল চক্রের হাত থেকে সরকারী সম্পতি রক্ষা ও তাদের বিচার দাবী করছি।
গাজীপুর বন্দর ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ জুয়েল গাজী বলেন, শুধু এ সম্পত্তি নয় সরকার গাজীপুর বন্দর ব্যবসায়ী ও বন্দরে বসবাসকারীদের সভা সমিতি করার জন্য ১৮ লক্ষ টাকা ব্যয় করে একটি একতলা আধুনিক ভবন নিমার্ণ করে দিয়েছেন। সেই ভবনটি গত ৬ মাস পূর্বে ভূমিদস্যু সোহেল রানার বড় ভাই আবুল কালাম জোরপূর্বক দখল করে বর্তমানে পরিবার-পরিজন নিয়ে সেখানে বসবাস করছেন।
স্থানীয় ব্যবসায়ী লিটন মিয়া বলেন, ভূমিদস্যু সোহেল রানা, দেশের উচ্চ পদস্থ কর্মকতার্ ও সরকার দলীয় অনেক সিনিয়র নেতাদের সাথে ছবি তুলে ফেইসবুকে আপলোড করে দেখান তার অনেক ক্ষমতা। এসব ছবি দেখিয়ে সাধারণ মানুষদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে অবৈধ উপায়ে অর্থ আদায় করে থাকেন। এ ছাড়াও সোহেল রানার বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষদের অহেতুক হয়রানীসহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
গাজীপুর বন্দরের সাধারণ ব্যবসায়ীরা সরকারী সম্পত্ত্বি দখলকারী ও সাধারণ মানুষদের হয়রানীকারী চিহ্নিত ভূমিদস্যু সোহেল রানা ও তার ভাই আবুল কালামসহ দখল চক্রের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
এ বিষয়ে ভূমিদস্যু সোহেল রানা ও তার ভাই আবুল কালাম তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো অস্বীকার করে বলেন, জোরপূর্বক জমি দখল নয়, সরকার আমাদের ওই জমিতে বন্দোবস্ত দিয়েছেন।
এ বিষয়ে আমতলী উপজেলা নিবার্হী অফিসার মোঃ আসাদুজ্জামান মুঠোফোনে বলেন, সরকারী সম্পত্ত্বি কেহ দখল করতে পারবেনা। যারা করবে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।