বুধবার, ২১ মে ২০২৫, ০৬:১২ পূর্বাহ্ন

জেনোসাইডের সংজ্ঞা নিয়ে চিফ প্রসিকিউটরের বক্তব্য ভুলভাবে প্রচার

আলোকিত স্বপ্নের বিডি
  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ১৩ মে, ২০২৫

বিভিন্ন গণমাধ্যমে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলামের বরাত দিয়ে “জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশে কোনো গণহত্যা হয়নি: চিফ প্রসিকিউটর” শিরোনামে খবর প্রকাশ হয়েছে, যা পাঠককে ভুল বার্তা দিতে পারে। মূলত তিনি জুলাইয়ের ব্যাপক হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে প্রচলিত ভাষায় গণহত্যা বললেও আন্তর্জাতিক আইনের পরিভাষায় মাস কিলিং এবং জেনোসাইডের যে পার্থক্য আছে, সেটি স্পষ্ট করেন। তার এই বক্তব্যকেই ভুলভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে এসব শিরোনামে।

সোমবার (১২ মে) ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিকের প্রশ্ন করেন, অভিযোগ হিসেবে “গণহত্যা” আছে কিনা। এর জবাবে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, “বাংলাদেশের প্রচলিত ভাষায় যদি একসাথে বেশি মানুষ মারা যায় তাহলে আমরা বলি যে গণহত্যা হয়েছে। একসাথে অনেক মানুষ মারা গেছে এটাকে মাস কিলিং অথবা ম্যাসাকার বলতে পারেন, কিন্তু আইনের যেটা জেনোসাইড- সেইটা কিন্তু এটা না।”

তিনি আরো ব্যাখ্যা করে বলেন, “ধরেন একশ জন লোককে মেরে ফেলা হলো। এটা বাংলাদেশের… আমরা বাংলা ভাষায় বলি গণহত্যা করেছে। কিন্তু ইন্টারন্যাশনাল আইনের জেনোসাইড এটা নয়। সুতরাং আমরা যদি আমাদের স্বাভাবিক পরিভাষায় গণহত্যা বলিও, সেটা বলতে কোন বাধা নেই। কিন্তু আইনে অপরাধ হিসেবে জেনোসাইড যে জিনিসটা সংজ্ঞায়িত আছে, সেটা হওয়ার জন্য সার্টেন ক্রাইটেরিয়া ফুলফিল করতে হয়। বাংলাদেশে মাসকিলিং হয়েছে, ব্যাপক ভিত্তিক হত্যাকাণ্ড হয়েছে, দেড় হাজার এর উপরে মানুষকে মারা হয়েছে , এইটা ম্যাসাকার, এটা ব্যাপক হারে হত্যা, মার্ডার। কিন্তু ইট ইজ নট জেনোসাইড। এটা হচ্ছে প্রস্তাব। আইনের জেনোসাইড এবং মাসকিলিং এক জিনিস নয়।”

জেনোসাইড ও মাসকিলিং – দুটোর বাংলা পরিভাষা হিসেবে ‘গণহত্যা’ শব্দের ব্যবহার করার চল থাকার কারণে আইনি অবস্থান থেকে অনেকেই বিভ্রান্তের মধ্যে পড়েন। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ‘জেনোসাইড’ বা এই অর্থে ‘গণহত্যা’ বলতে কিছু নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে (রেসিয়াল, নেশনাল, রিলিজিয়াস, এথনিক) আংশিক বা সম্পূর্ণ ধ্বংসের নিয়তে (ইন্টেন্ট) পরিকল্পিত কিছু অপরাধমূলক কাজকে বোঝানো হয়। জেনোসাইড অর্থে গণহত্যা বর্গে অন্তর্ভূক্ত হওয়ার জন্য আক্রান্ত (টারগেটেড) গোষ্ঠীকে উপর্যুক্ত নির্দিষ্ট চারটি গোষ্ঠী পরিচয়ের আওতায় পড়তে হবে এবং সেই নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে আংশিক বা পুরোপুরি ধ্বংস করার নিয়ত (ইন্টেন্ট) এর উপস্থিতি থাকতে হবে। উল্লেখ্য, আইনে নির্দিষ্ট বর্গের মধ্যে ‘রাজনৈতিক’ গোষ্ঠী নেই। ফলে, রাজনৈতিক কোনো দল বা গোষ্ঠীকে ধ্বংসের নিয়তে চালানো নিধনযজ্ঞ আন্তর্জাতিক আইনে জেনোসাইডের সংজ্ঞায় পড়ে না। তবে, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী এটা মানবতাবিরোধী অপরাধ বা ক্রাইমস এগেইন্সট হিউম্যানিটি। শব্দের বিভ্রান্তি এড়ানোর জন্য বাংলাদেশের অনেক গবেষক জেনোসাইড এর বাংলা হিসাবে ‘গণহত্যা’ না বলে ‘জেনোসাইড’ই বলার পক্ষে মতামত প্রদান করেন।

আপনার মন্তব্য লিখুন

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ
  • © All rights reserved © 2019 alokitoswapner-bd.com - It is illegal to use this website without permission.
Design & Developed by Freelancer Zone
themesba-lates1749691102