শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:৩৭ পূর্বাহ্ন

মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পেয়েও ভর্তি অনিশ্চয়তায় আরিফা।

মোঃ তরিকুল মোল্লা,(ফকিরহাট,বাগেরহাট সদর)প্রতিনিধি।
  • প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী, ২০২৫

মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পেয়েও ভর্তি অনিশ্চয়তায় আরিফা।

বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের হতদরিদ্র ভ্যানচালক শেখ আসাদুজ্জামান ও গৃহিণী হামিমা আক্তার হিমা দম্পতির বড় মেয়ে অদম্য মেধাবী আরিফা আক্তার। বরিশাল সরকারি মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন কিন্তু অর্থের অভাবে ভর্তি হতে এবং পরবর্তী সময়ে খরচ চালিয়ে যেতে পারবেন কি না তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তার বাবা-মা।

আরিফার পরিবার জানায়, বাবা-মায়ের চরম দারিদ্রতার মধ্যে বেড়ে ওঠা আরিফা আক্তারের। অদম্য মেধার কারণেই পারিবারিক প্রতিকূলতা থাকা সত্ত্বেও পড়াশোনায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হয়েছে আরিফা। প্রাথমিকে ট্যালেন্টপুল ও জুনিয়রে বৃত্তি পেয়েছে। ছোট বেলা থেকে লেখাপড়ায় প্রচণ্ড আগ্রহ ও বাবার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে আজ সে সরকারি মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পেয়েছে।

তার বাবা প্রতিদিন নিজের ভ্যান চালিয়ে কচুয়া থেকে বাগেরহাট সরকারি গার্লস স্কুলে নিয়ে যেতেন এবং ছুটি শেষে আবারো ভ্যানে বাড়িতে পৌঁছে দিতেন। প্রতিদিন প্রায় ৩০ কিলোমিটার বাবার ভ্যানে আসা যাওয়া করত আরিফা। প্রচণ্ড অর্থ কষ্টের মধ্যে মেয়ের পড়াশোনার জন্য বাগেরহাটে ছোট্ট একটি বাসা ভাড়া নেন তার বাবা। আরিফার ছোট বোন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। প্রচণ্ড অর্থকষ্ট থাকলেও মা-বাবা তাদের দুই বোনের পড়াশোনা বন্ধ করেননি।

২০২২ সালে বাগেরহাট সরকারি গার্লস স্কুলে এসএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পাওয়ার পর চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে বাগেরহাট সরকারি পিসি কলেজে ভর্তি হয় আরিফা এবং ২০২৪ সালে এইচএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে বরিশাল সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পায়।

ভ্যানচালক বাবা ও মা সেলাই মেশিনের কাজ করে মেয়েকে এ পযন্ত আনতে তাদের ব্যাংক, এনজিও এবং স্বর্ণের জিনিস বন্ধন রেখে দুই লক্ষ টাকার ঋণ করতে হয়েছে। এমনিতে লোনের চাপ অন্যদিকে ভর্তির অর্থ জোগান দেওয়া হতদরিদ্র মা-বাবার পক্ষে কোনমতেই সম্ভব নয়। মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়ে আনন্দিত হওয়ার চেয়ে অর্থাভাবে ভর্তি হওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন হতদরিদ্র পরিবারের মেয়ে আরিফা আক্তার।

হতদরিদ্র ভ্যান চালক শেখ আসাদুজ্জামান বলেন, আমি নিজের নামটাও লিখতে পারি না। যখন আমার এই মেয়ে তার মায়ের গর্ভে তখন হাসপাতালে ডাক্তারের কাছে আমি স্বাক্ষর দিতে পারি নাই। তখন থেকেই আমি স্বপ্ন দেখেছি আমার যত কষ্টই হোক না কেন আমি আমার মেয়েকে ডাক্তার বানাবো। আল্লাহ আমার সেই স্বপ্ন পূর্ণ করেছে।

আরিফার মা হামিমা আক্তার হিমা বলেন, পড়ার প্রতি মেয়ের প্রচণ্ড ঝোঁকের কারণেই অর্থকষ্টের মধ্যেও তার পড়াশোনা বন্ধ করেনি। স্বামীর আয় ও নিজে সেলাই মেশিনের কাজ করে অনেক সময় না খেয়ে থাকলেও তার পড়ালেখা কখনো বন্ধ করেনি। আরিফার ছোট বেলা থেকেই ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন ছিল। দুই লাখ টাকা ঋণের চাপ অন্যদিকে ভর্তির অর্থ জোগান দেওয়া আমাদের পক্ষে কোনোমতেই সম্ভব হচ্ছেনা। তাই মেয়ের ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন পূরণে সমাজের বিত্তবান ও কলেজ কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করেন।

আপনার মন্তব্য লিখুন

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ
  • © All rights reserved © 2019 alokitoswapner-bd.com - It is illegal to use this website without permission.
Design & Developed by Freelancer Zone
themesba-lates1749691102