শনিবার, ২৪ মে ২০২৫, ০৯:২১ পূর্বাহ্ন

ভোটই শেষ কথা নয়, আছে জটিল হিসাব।

আলোকিত স্বপ্নের বিডি
  • প্রকাশের সময় : সোমবার, ৪ নভেম্বর, ২০২৪

ভোটই শেষ কথা নয়, আছে জটিল হিসাব।

সময় যত ঘনিয়ে আসছে, ততই উত্তেজনার পারদ চড়ছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ঘিরে। শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় গুরুত্বপূর্ণ স্টেটগুলো চষে বেড়াচ্ছেন ডেমোক্রেট প্রার্থী কমলা হ্যারিস এবং রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। এখন পর্যন্ত জরিপের ফল বলছে, হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে। নিজেদের আগামী প্রেসিডেন্ট বেছে নিতে প্রায় সমান ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছেন নাগরিকরা। গুরুত্বপূর্ণ সুইং স্টেটগুলোতে ট্রাম্প কিছুটা এগিয়ে থাকলেও দশমিকের ব্যবধানে পিছিয়ে আছেন সার্বিকভাবে। তবে, শেষ পর্যন্ত জনগণের ভোটের লড়াইয়ে যিনিই এগিয়ে থাকুক না কেন, শুধু তার ওপর ভিত্তি করে হস্তগত করতে পারবেন না হোয়াইট হাউসের চাবি।

প্রতি চার বছর পর পর প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় যুক্তরাষ্ট্রে। নভেম্বর মাসের প্রথম মঙ্গলবার হয় ভোটগ্রহণ। এ নির্বাচনের মজার বিষয় হলো, বেশি ভোট পেয়েও হেরে যেতেন পারেন প্রার্থী। কারণ, প্রত্যক্ষভাবে ভোটারদের মাধ্যমে নয়, ‘ইলেকটোরাল কলেজ’ নামে বিশেষ পদ্ধতিতেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয় যুক্তরাষ্ট্রে। অনেকের কাছে এটি কিছুটা জটিল মনে হলেও জয়ের চমক লুকিয়ে থাকে এই পদ্ধতিতেই।

কলেজ শব্দটির অর্থ এখানে সেই ব্যক্তিদের বোঝানো হয় যারা একটি অঙ্গরাজ্যের ভোট দেওয়ার অধিকারী। ইলেকটোরাল কলেজ হচ্ছে কর্মকর্তাদের একটি প্যানেল যাদের ইলেক্টরস বলা হয়। এরা এক কথায় নির্বাচকমণ্ডলী। প্রতি চার বছর পর পর এটি গঠন করা হয় এবং এরাই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্টকে বাছাই করেন। কংগ্রেসে প্রতিনিধিত্বের অনুপাতে প্রতিটি স্টেটের ইলেক্টরসের সংখ্যা নির্ধারিত হয়; যা নির্ধারিত হয় স্টেটে সিনেটরের সংখ্যা (প্রত্যেক স্টেটে দুইজন) এবং প্রতিনিধি পরিষদে প্রতিনিধির (যা জনসংখ্যার অনুপাতে) যোগফল মিলে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ইলেকটোরাল কলেজের মোট আসন সংখ্যা ৫৩৮টি। এই নির্বাচনে বিজয়ী হতে হলে কমপক্ষে ২৭০টি ইলেকটোরাল ভোট পেতে হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যের একটিতে জয়ী হওয়ার অর্থ একজন প্রার্থী সেই অঙ্গরাজ্যের সবকটি ‘ইলেকটোরাল কলেজ’ ভোট পেয়ে যাবেন।

যেভাবে ইলেকটোরাল কলেজ কাজ করে:

 

একজন প্রার্থী সারা দেশে হয়তো কম ভোট পেয়েছেন, কিন্তু বেশ কতগুলো কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গিয়ে তিনি প্রেসিডেন্ট হয়ে যেতে পারেন। ধরা যাক, টেক্সাসে একজন প্রার্থী ভোটারদের সরাসরি ভোটের ৫০.১ শতাংশ পেয়েছেন, তাকে ওই অঙ্গরাজ্যের হাতে থাকা ৪০টি ইলেকটোরাল ভোটের সবগুলোই সেই প্রার্থী পেয়ে যাবেন। একটি অঙ্গরাজ্যে জয়ের ব্যবধান যদি বিরাট হয়ও তারপরেও জয়ী প্রার্থী সবগুলো ইলেকটোরাল ভোটই পাবেন।

 

ইলেকটোরাল ভোটে ‘টাই’ হলে যা হবে:

কোনো ক্ষেত্রে যদি ‘ইলেকটোরাল কলেজ’ ভোটিংয়েও স্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা কেউ না পান, সেক্ষেত্রে মার্কিন আইনসভার নিম্ন-কক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভস ভোট দিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করবে। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এরকম ঘটনা ঘটেছে মাত্র একবারই; ১৮২৪ সালে।

যেভাবে এলো ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতি:

১৭৮৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান যখন প্রণয়ন করা হয় তখন একটি জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করা বাস্তবে অসম্ভব ছিল। এর কারণ ছিল দেশটির আয়তন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার পশ্চাৎপদতা।

 

আর যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান প্রণেতারা চাননি রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে থাকা আইনপ্রণেতাদের হাতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ুক। তাই তারা এই ক্ষমতা দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা অঙ্গরাজ্যগুলোর হাতে তুলে দিতে চাইলেন। এই লক্ষ্যেই সংবিধান প্রণেতারা ইলেকটোরাল কলেজ সৃষ্টি করলেন, প্রতিটি অঙ্গরাজ্যকে ইলেকটর দিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভূমিকা রাখার সুযোগ দেওয়া হল।

 

সরাসরি ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে বেশি জনসংখ্যার অঙ্গরাজ্যগুলো এক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করবে এই বিবেচনায় প্রতিটি রাজ্যে অন্তত তিনজন ইলেকটর থাকার নিয়ম বেঁধে দেওয়া হয়। ইলেকটরের এই ন্যূনতম সংখ্যা অঙ্গরাজ্যের জনসংখ্যার আকারের ওপর নির্ভর করে না। তবে এর বেশি ইলেকটরের সংখ্যা অঙ্গরাজ্যগুলোর জনসংখ্যার অনুপাত বিবেচনায় নির্ধারিত হয়।

 

দেশজুড়ে ভোটে জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের চেয়ে এ পদ্ধতিতে ছোট অঙ্গরাজ্যগুলোর বেশি বক্তব্য রাখার সুযোগ থাকায় তারা ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতি সমর্থন করলেন মার্কিন সংবিধান প্রণেতারা। ইলেটোরাল ভোটের সংখ্যা অঙ্গরাজ্যের জনসংখ্যার আকারের ভিত্তিতে নির্ধারিত হতো বলে দক্ষিণাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্যগুলো সরাসরি ভোটের চেয়ে এ পদ্ধতিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ক্ষেত্রে বেশি প্রভাব রাখার সুযোগ পাওয়ায় তারাও এ পদ্ধতি সমর্থন করলেন। কারণ এখানে জনসংখ্যার বড় একটি অংশ ছিল দাসরা। দাসদের ভোটাধিকার না থাকলেও আদমশুমারিতে একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষের তিন-পঞ্চমাংশ ধরে তাদেরও গণনা করা হতো।

আপনার মন্তব্য লিখুন

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ
  • © All rights reserved © 2019 alokitoswapner-bd.com - It is illegal to use this website without permission.
Design & Developed by Freelancer Zone
themesba-lates1749691102