প্রকৃতির আশীর্বাদেই তৈরি সাগরের বুকে জেগে ওঠা কক্সবাজারের সাগর দ্বীপ কুতুবদিয়ার পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরে এ জেগে উঠেছে সম্ভবনাময় আরেকদ্বীপ।
♦কুতুবদিয়া থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত।
♦আগে থেকে জেলে সম্প্রদায়ের জানা শোনা থাকলেও স্থানীয় প্রশাসনের দৃষ্টিগোচর হয় ২০১৮ সালে তখনই নামকরণ করেন মায়াদ্বীপ।
♦দ্বীপটির আয়তন দৈর্ঘ্য প্রায় ৭কিলোমিটার,প্রস্ত প্রায় ২কিলোমিটার।
বঙ্গোপসাগরের বুকে এক অন্য ভুবন, যার চারদিকে অথই জলরাশি আর ঢেউয়ের খেলা। মাঝখানে যেন এক টুকরা ভূমি। মূলত এটি বিশাল চর। তবে এটির নাম ‘মায়াদ্বীপ’।কুতুবদিয়া থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দুরে পশ্চিমে সাগরে জেগে উঠেছে দ্বীপটি। ভাটার সময় দ্বীপটি পানির ওপর ভেসে ওঠে। জোয়ারের সময় এটি পানিতে তলিয়ে যায়।তবে বিশাল দ্বীপটির দৈর্ঘ্য প্রায় সাত কিলোমিটার এবং প্রস্থ প্রায় দুই কিলোমিটার।
দৃশ্যমান ডুবোচর নিয়ে অনুসন্ধান ও গবেষণা করেছেন বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার বলেন,দৃশ্যমান দ্বীপটি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে কুতুবদিয়ার অনেক অংশ সমুদ্রে বিলীন হয়ে গেছে। একটা সময় তিনি খুদিয়ারটেক এলাকায় কয়েক হাজার বসতঘর ও লবণ মাঠ দেখেছেন। অথচ এখন কিছুই নেই। পলি জমে দ্বীপের পশ্চিমে যে বিশাল ডুবোচরের সৃষ্টি হয়েছে, তা আগামী কয়েক বছরে পানির ওপরে (সব সময় দৃশ্যমান) চলে আসবে। তখন জোয়ারের পানিতেও চরটি আর ডুববে না। চরটি সাগরে তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কাও নেই।সুত্র-প্রথম আলো।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ভাটার সময় উপকূলীয় বন বিভাগের কুতুবদিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে ২৩ সদস্যের একটি দল এই চরে গিয়ে প্রায় ৩০০টি বাইনগাছের চারা রোপণ করেন।এ বিষয়ে আবদুর রাজ্জাক বলেন, ডুবোচরটি ভাটার সময় ভেসে ওঠে, জোয়ারের সময় ডুবে যায়। তাই নরম বালুচরে পরীক্ষামূলকভাবে বাইনগাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। এই চারা পানিতে ডুবে গেলেও বাঁচতে পারে। গাছগুলো রক্ষা পেলে ডুবোচরে আরও গাছ লাগানো হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাশেদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, দ্বীপটি নিয়ে কুতুবদিয়ার মানুষের আগ্রহ ও চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। সরকারি কর্মকর্তাসহ অনেকে ঘুরে এসেছেন। দ্বীপের মানুষ পূর্বপুরুষের হারিয়ে যাওয়া ভূসম্পদ ফিরে পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন।
স্হানীয়দের তথ্য মতে,জেগে ওঠা চরের কাছে বাড়িঘর ছিল, যা ৬০ এর দশকের দিকে ঘূর্ণিঝড়ে তাঁদের ঘরবাড়ি লন্ডভন্ড হয়ে যায়। ওই সময়ে বসতভিটাসহ জমি হারান কুতুবদিয়ার কয়েক হাজার মানুষ।১৯৬০ ও ১৯৯১ সালের বড় দুটি ঘূর্ণিঝড় হয়। এতে কুতুবদিয়ার ৩০-৪০ শতাংশ ভূখণ্ড সাগরে বিলীন হয়ে যায়। তখন গৃহহীন ৩০ হাজারের বেশি মানুষ কক্সবাজার শহরসহ জেলার বিভিন্ন জায়গায় বসতি শুরু করেন।
নতুন চরে গিয়ে দেখা যায়,চরের ওপর দল বেঁধে হাজার হাজার কাঁকড়া কাছে যেতেই গর্তে ঢুকে যায় কাঁকড়ার দল।ভাটার সময় পানির ওপর ভেসে ওঠে। তখন নৌকা নিয়ে কুতুবদিয়ার লোকজন ওই চরে গিয়ে খেলাধুলা করেন। জোয়ারের সময় চরটি পানিতে তলিয়ে যায়।
আগে জেলে সম্প্রদায়ের বাইরে নতুন দ্বীপটি সম্পর্কে তেমন একটা জানা-শোনা ছিল না। তবে এই দ্বীপ চরটি সম্পর্কে মানুষ জানতে পারছে প্রায় ৭/৮ বছর আগে। ২০১৮ সালে দ্বীপটি স্হানীয় প্রশাসনের দৃষ্টিগোচর হয়, তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) সুজন চৌধুরীর নেত্বতে সরকারী বেসরকারী বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের নিয়ে দ্বীপটি পরিদর্শন করেছিলেন,তখনই আলোচনা ও সবার মতামতের ভিত্তিতে দ্বীপটির নামকরণ করা হয় মায়াদ্বীপ।সেই থেকে এই নামটি পরিচিত।