সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:১০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
ময়মনসিংহে পাচারের সময় মানব কঙ্কাল উদ্ধার, গ্রেপ্তার- ২। কোকোর স্মৃতিতে ৮ দলীয় ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত। বাগেরহাটে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লটারি পদ্ধতি বাতিলের দাবীতে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন। বঙ্গবন্ধু রেল সেতুর নাম পরিবর্তন। কালিহাতীতে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ট্রাকসহ ৬ ডাকাত গ্রেফতার। বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসম্মত শিক্ষক প্রয়োজনঃ ড. আবুল কাশেম। বাংলাদেশি রোগী পেতে সীমান্তে মেট্রো চালু করবে ভারত। ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের ৪ স্পটে দুর্ঘটনার কবলে ১০ গাড়ি, নিহত ১, আহত ১৫। নরসিংদীতে ছাত্রদলকর্মীকে গুলি করে হত্যা। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ।

লিঠন দত্তের ছোট গল্প “অপদার্থ নরেন” পাঠক জনপ্রিয়তা বাড়ছে।

লিটন দত্ত,বাঘাইছড়ি, রাংগামাটি পার্বত্য জেলা।
  • প্রকাশের সময় : শুক্রবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২৩

ছোটগল্প :অপদার্থ নরেন।
লেখক: লিটন দত্ত।

নরেন গ্রামের আর দশজন মানুষের মতো কেটে খাওয়া একটি বালক।সবে মাত্র এইট থেকে নাইনে উঠেছে।পেশায় সে একজন আইসক্রিম বিক্রিতা।প্রতিদিন সে ফ্যাক্টরি থেকে আইসক্রিম নিয়ে বিভিন্ন স্কুলের সামনে গিয়ে আইসক্রিম বিক্রি করে। আর যা আয় করে তা দিয়ে সারাদিন যা ইচ্ছা তা করে টাকা নষ্ট করে।মাঝে মাঝে সে গ্রামের বখাটে ছিলেদের সাথে মিশে বিড়ি সিগারেট খায়।করোনা কালীন সময় স্কুল কলেজ সব বন্ধ সাথে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে যাওয়া নিষেধ।
তাই সে খুব আর্থিক এবং মানসিক কষ্ট পরে যায়।

এতে করে সে তার পেশা পরিবর্তন করে গ্রামে গ্রামে গিয়ে বাংলা সাবান ও মাস্ক বিক্রির ব্যবসা শুরু করে।
হঠাৎ একদিন সেই দেখতে পেল একটি মেয়ে তার মাকে নিয়ে খুব কাঁন্না কাটি করছে।তা দেখে নরেন মেয়েটির কাছে জানতে চাইলো বোন তোমার মার কি হয়েছে?

নরেন দেখলো মেয়েটি কিছু বলতে পারছে না। শুধু ফোঁপিয়ে ফোঁফিয়ে কাঁন্না করে যাচ্ছে।নরেন দেখলো তার মার শ্বাসকষ্ট হচ্ছে।

নরেন তার মাকে নিয়ে হাসপাতালে নিয়ে গেল।সেখানে ডাক্তার দূর থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাসায় নিয়ে যেতে বলে।নরেন ঔষধ ও কিছু খাদ্যদ্রব্য সহ মেয়েটিকে মাকে নিয়ে বাসায় পৌঁছে দিল।

আসার সময় নরেন বলল সন্ধ্যা হয়ে আসছে, এবার আমার যেতে হবে।

মেয়েটি বলল, দাদা মা তোমাকে বসতে বলছে।
মেয়েটি বললো, দাদা তোমার নাম কি? তুমি কোথায় থাকো? কি করো?
আমার নাম নরেন। ক্লাস নাইনে পড়ি,এখনও ভর্তি হয়নি।আমি পাশের গ্রামে থাকি।আমার আর একটি পরিচয় আছে, আমি আইসক্রিম বিক্রিতা।
বোন তোমার নাম কি?
দাদা আমার নাম সুরবালা।আমি অষ্টম শ্রেনীতে পড়ি।
তুমি না আসলে আজ মাকে মনে হয় আর বাঁচাতে পারতাম না।মাকে আর কোনো দিন হয়তো মা বলে ডাকতে পারতাম না দাদা।তুমি আমাদের কাছে ভগবানের দেবদূত হয়ে এসেছো দাদা।তোমাকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবো না দাদা।তোমার কাছে আমরা অনেক অনেক কৃতজ্ঞ নরেন দা।

আচ্ছা বোন তুমি তখন কাঁন্না করছিলে কেন?

কারণ গ্রামের একজন মানুষও মাকে হাসপাতালে নিতে আসছে না ।কারণ মার নাকি করোনা হয়েছে মাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাদেরও করোনা হবে।আর সবাই আমাকে দেখলে ঘরের দরজা বন্ধ করে দিচ্ছে।
এই দৃশ্য দেখার পর কি দাদা কাঁন্না না করে থাকতে পারি!

ঠিক আছে বোন আজ আমি আসি।মাসিমাকে বলিও অন্য একদিন আসবো।সন্ধ্যা হলে বাড়ি ফিরতে আমার কষ্ট হবে।ঠিক আছে নরেন দা আসবে কিন্তু আবার

নরেন বিদায় নিয়ে বাড়ি ফিরে আসলো আজ তার আজ কোনো কিছুই ভালো লাগছে না।কারণ সুরবালা মায়া বড়া চেহারা আর মায়ের মুখ।তার সব সময় মনে পড়ছে।

নরেনের এমন একজন অপদার্থ।যার মা বাবা কে তার জন্ম পরিচয় কি সে আজও জানেনা।কারণ সে কাকার বাসায় থাকে।প্রতিদিন সকাল হলে নরেন কে শুনতে হয়।তোমাকে বসে বসে আর খাওয়াতে পারবো না বাবু।এবার নিজের চেষ্টা নিজে করো।আপদ বিধায় হও আর কত আমি আর পারছি না, এ বুড়া শরীলে এতোগুলো মানুষকে বসেই বসেই খাওয়াতে।

তাই আজ নরেনের কাছে তাঁর মা বোনের জন্য খুব মায়া হচ্ছে ,তার বুক ছট ছট করছে।তার কেন একটি পরিবার নাই।কাকীমার বাড়িতে অপদার্থ নরেন।সুরবালার কাছে দেবতা তুল্য দাদা।এটায় মানব জীবন কোথাও তুমি অপদার্থ,আবার কোথাও তুমি দেবতুল্য।

আর গ্রামের অন্য দশজন মানুষের কাছে বখাটে আইসক্রিমওলা নরেন সুরবালার কাছে দেবতুল্য দাদা ভগবানে পাঠানো দেবদূত।কি যে রহস্য ঘেরা এই মানব জীবন।এই জীবন অন্তহীন এক পথ চলা।

সুরবালা কিছুতে তাঁর দেবতুল্য দাদাকে এক মুহুত্বের জন্য সে ভুল থাকতে পারে না।সুরবালা নিজেকে আজ বড্ড অসহায় মনে করছে আমার কেন নরেন দার মতো একজন দাদা দিলো না ভগবান।

জীবনের গল্প গুলো এমনি হয়। কারো কাছে আপনি যতটা অপ্রয়োজনীয়। ঠিক অপর কোন মানুষের কাছে আপনি ততটা প্রয়োজনীয়। কারো অবহেলা আর ভালোবাসার অভাবে না থেকে নরেনের মতো স্বাধীন জীবন অনেক ভালো।

সুরবালা সাথে নরেন প্রেম ছিলো কি জানিনা
সুরবালা সরল মুখের হাসি বা কাঁন্নার যে মায়া তা দেখে নরেন এর হ্নদয়ের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে।

নরেন এর জন্ম পরিচয় হয়তো ঠিক নেই,সে হয়তো একজন আইসক্রিম বিক্রিতা বখাটে বা খারাপ ছাত্র এই রকম অসংখ্য তার খারাপ অভ্যাস আছে।সেই কিন্তু একজন স্বাধীনচেতা মানুষ ।সে মানুষের বিপদে ঝঁপিয়ে পরে যে মানবিকতার পরিচয় দিয়েছে বর্তমান সমাজে তা খুবই বিরল।

সমাজের ভদ্র বাবুরা যখন নিজের ঘরের দরজা বন্ধ করে নিজের সুরক্ষার কথা ভাবে আর নরেনরা
নিজের জীবন বাজী রেখে ঝাঁপিয়ে পরে মানুষের বিপদে,মানুষকে বাঁচাতে।

আপনার মন্তব্য লিখুন

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ
  • © All rights reserved © 2019 alokitoswapner-bd.com - It is illegal to use this website without permission.
Design & Developed by Freelancer Zone
themesba-lates1749691102