তিন মাসে নতুন কোটিপতি হয়েছেন ৩৩৬২ ব্যাংক হিসাবধারী।
তিন মাসেই দেশে নতুন কোটিপতির তালিকায় নাম লিখিয়েছেন ৩ হাজার ৩৬২ ব্যাংক হিসাবধারী। এর ফলে ২০২৩ সালের জুন শেষে কোটিপতি হিসাবধারীর সংখ্যা ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৫৪টিতে পৌঁছেছে। এসব হিসাবে জমা আছে ৭ লাখ ৩১ হাজার ৩৩০ কোটি টাকা, যা মোট আমানতের ৪৩ শতাংশের বেশি। তিন মাস আগে চলতি বছরের মার্চে কোটিপতি ব্যাংক হিসাবধারী ছিল ১ লাখ ১০ হাজার ১৯২টি। এসব হিসাবে জমা ছিল ৬ লাখ ৯০ হাজার ৮৭৭ কোটি টাকা। তিন মাসের ব্যবধানে কোটিপতি হিসাবধারীদের আমানত বেড়েছে ৪০ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা। আর চলতি বছরের প্রথম ছয় মাস কোটি টাকার অ্যাকাউন্টে যোগ হয়েছে ৩ হাজার ৬০৮টি হিসাব।
গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের জুন শেষে ব্যাংকগুলোয় জমাকৃত আমানতের পরিমাণ ছিল ১৬ লাখ ৮৭ হাজার কোটি টাকা। মোট ১৪ কোটি ৫৯ লাখ ৭৩ হাজার ১৯২টি হিসাবে এ আমানত জমা হয়েছে। এর মধ্যে কোটিপতিদের যে আমানত রয়েছে, তা মোট ব্যাংকিং খাতের আমানতের ৪৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ। জুন শেষে কোটিপতি হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৫৪টি।
তিন মাস আগে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত ব্যাংক খাতে মোট আমানতকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪ কোটি ১১ লাখ ৩৭ হাজার ২৫৬টি। যেখানে জমা ছিল ১৬ লাখ ১৩ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ কোটি টাকার বেশি আমানত রয়েছে এমন ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা রয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ১৯২টি। কোটি টাকার ওপর এসব হিসাবে জমা আছে ৬ লাখ ৯০ হাজার ৮৭৭ কোটি ৫১ লাখ টাকা। আর গত বছরের ডিসেম্বরে আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ১৩ কোটি ৬২ লাখ ৪৯ হাজার ৭৬৪টি। যেখানে জমা ছিল ১৫ লাখ ৮৮ হাজার ১০ কোটি টাকা।
২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতে মোট আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ১২ কোটি ৪৮ লাখ ৯৬ হাজার ৯৩৪টি। এসব হিসাবে জমার পরিমাণ ছিল ১৫ লাখ ১২ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। আর কোটি টাকার ওপরে ১ লাখ ১ হাজার ৯৭৬টি হিসাবে জমার পরিমাণ ছিল ৬ লাখ ৫৩ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা। ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোতে কোটি টাকার বেশি আমানতের হিসাব ছিল ৯৩ হাজার ৮৯০টি। হিসাবগুলোতে জমার পরিমাণ ছিল ৫ লাখ ৯৫ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, কোটি টাকার হিসাব মানেই কোটিপতি ব্যক্তির হিসাব নয়। কারণ ব্যাংকে ১ কোটি টাকার বেশি অর্থ রাখার তালিকায় ব্যক্তি ছাড়া অনেক প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। আবার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কতটি ব্যাংক হিসাব খুলতে পারবে, তার কোনো নির্দিষ্ট সীমা নেই। ফলে এক প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির একাধিক হিসাবও রয়েছে। এর মধ্যে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার কোটি টাকার হিসাবও রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ১০টি ক্যাটাগরিতে কোটি টাকার আমানতকারীদের হিসাব করেছে। ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত ১ কোটি ১ টাকা থেকে ৫ কোটি টাকার আমানতকারীর হিসাব সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৯ হাজার ৭৭২টি। যেখানে জমার পরিমাণ ১ লাখ ৮৬ হাজার ৭০৮ কোটি টাকা। ৫ কোটি থেকে ১০ কোটির ১২ হাজার ২৪৫টি হিসাবে জমার পরিমাণ ৮৬ হাজার ৬৩১ কোটি টাকা। আর ১০ কোটি থেকে ১৫ কোটি টাকার হিসাবের সংখ্যা রয়েছে ৪ হাজার ৮১টি, ১৫ কোটি থেকে ২০ কোটির মধ্যে ১ হাজার ৮৬৫টি, ২০ কোটি থেকে ২৫ কোটির মধ্যে ১ হাজার ২৭৬টি, ২৫ কোটি থেকে ৩০ কোটির মধ্যে রয়েছে ৯০৯টি আমানতকারীর হিসাব। এ ছাড়া ৩০ কোটি থেকে ৩৫ কোটি টাকার মধ্যে ৫০৭টি এবং ৩৫ কোটি থেকে ৪০ কোটির মধ্যে রয়েছে ৩৫৩টি, ৪০ কোটি থেকে ৫০ কোটি টাকার হিসাব সংখ্যা ৭২২টি। তাছাড়া ৫০ কোটি টাকার বেশি আমানত রাখা হিসাবের সংখ্যা ১ হাজার ৮২৪টি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে দেশে কোটিপতি আমানতকারী ছিল ৫ জন, ১৯৭৫ সালে তা ৪৭ জনে উন্নীত হয়। ১৯৮০ সালে কোটিপতিদের হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ৯৮টি। এরপর ১৯৯০ সালে ৯৪৩টি, ১৯৯৬ সালে ২ হাজার ৫৯৪, ২০০১ সালে ৫ হাজার ১৬২টি, ২০০৬ সালে ৮ হাজার ৮৮৭টি এবং ২০০৮ সালে ছিল ১৯ হাজার ১৬৩টি। ২০২০ সালে ডিসেম্বর শেষে দাঁড়ায় ৯৩ হাজার ৮৯০টিতে। ২০২১ সালের ডিসেম্বর বেড়ে কোটিপতি হিসাব দাঁড়ায় ১ লাখ ১ হাজার ৯৭৬টিতে। ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কোটি টাকার হিসাবের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৯ হাজার ৯৪৬টি।