বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেলের ছাত্রাবাসের ব্যবস্থাপনা কমিটি বিলুপ্ত।
ছাত্রীকে র্যাগিং ও সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনার পর বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের আবাসিক ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে গঠিত হোস্টেলগুলোর ব্যবস্থাপনা কমিটি বাতিল করা হয়েছে। একই সাথে ছাত্র-ছাত্রীদের সমস্যা হোস্টেল সুপার ও সহকারী হোস্টেল সুপারকে জানানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আবাসিক ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে গঠিত কমিটিগুলো শনিবার (২৬ আগস্ট) বিকেলে বিলুপ্ত করা হয়েছে বলে উপাধ্যক্ষ ডা. জি এম নাজিমুল হক জানিয়েছেন।
র্যাগিংয়ের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর হোস্টেলের কমিটিগুলো বাতিল করা হলেও উপাধক্ষ্য জানান, ছাত্রী নিবাসে কোনো র্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটেনি। ছাত্রী নিবাসের একটি কক্ষে তিন ছাত্রীর মধ্যে সামান্য দ্বন্দ্ব হয়। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে ঝামেলা হয়েছিল। একপক্ষ ছাত্রী নিবাসের ব্যবস্থাপনা কমিটির কাছে বিচার দেয়। ব্যবস্থাপনা কমিটি বিচার করায় একজন ক্ষুব্ধ হয়। সে ক্ষুব্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
উপাধ্যক্ষ আরও বলেন, ব্যবস্থাপনা কমিটির বিচার করার কোনো এখতিয়ার নেই। তাই কমিটিগুলো বিলুপ্ত করা হয়েছে। এছাড়াও ছাত্রী নিবাসের অবাসিক ছাত্রীদের কক্ষের রদবদল করা হবে।
তিনি আরও জানান, অধ্যক্ষ ডা. ফয়জুল বাশার সব শিক্ষার্থীকে হলে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করার নির্দেশনা দিয়েছেন। কেউ ভবিষ্যতে ঝামেলা করলে কিংবা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করলে একাডেমিকভাবে কঠোর শাস্তি দেওয়ার কথা জানিয়ে দিয়েছেন অধ্যক্ষ।
গক বুধবার রাতে ছাত্রী হলে র্যাগিংয়ের শিকার হন দুই ছাত্রী। তাদের একজন অভিযোগ করে জানান, বেশ কয়েক দিন ধরেই ছাত্রলীগের নেত্রী পরিচয় দেওয়া ছাত্রীরা তাকে এবং তার রুমমেটকে নানাভাবে গালাগাল দিয়ে মানসিক নির্যাতন করে আসছে। এতে ভীতসন্ত্রস্ত ছিলেন তারা। তাদের সঙ্গে যেন এ ধরনের আচরণ না করা হয়, সে জন্য নেতৃত্ব দেওয়া ওই ছাত্রীদের একজন সহপাঠীকে দিয়ে অনুরোধ করান তিনি। কিন্তু এতে অভিযুক্তরা ক্ষেপে যান।
এর জেরে বুধবার রাত ১১টার দিকে ওই ছাত্রী ও তার রুমমেটকে হলের ৬০৬ নম্বর কক্ষে ডেকে নেওয়া হয়। এরপর তাদের দুজনকে দাঁড় করিয়ে অভিযুক্তদের সহপাঠীর কাছে কেন ‘নালিশ করা হয়েছে’, এ জন্য কৈফিয়ত চান এবং অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করেন। এক পর্যায়ে তাদের মুঠোফোন নিয়ে তল্লাশি করার জন্য কয়েকজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। আধা ঘণ্টা নানাভাবে শাসিয়ে দুই ছাত্রীকে তাদের কক্ষে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কক্ষে ফিরে ভীতসন্ত্রস্ত এক ছাত্রী বিষয়টি অভিযুক্তদের ওই সহপাঠীকে জানালে তিনি ফোন করে ছাত্রলীগ পরিচয় দেওয়া নেত্রীদের কাছে উষ্মা প্রকাশ করেন। এরপর ভুক্তভোগী ওই ছাত্রীকে আবার ডাকা হয়।
র্যাগিংয়ের শিকার ছাত্রী আরও বলেন, রাত ১২টার দিকে দ্বিতীয় দফায় ডেকে নিয়ে দুই ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রেখে আবারও গালাগাল করা হয় এবং ভয়ভীতি দেখানো হয় তাকে। এ সময় ওই ছাত্রী কান্নাকাটি করেন এবং তিনি অসুস্থতার কথা জানিয়ে তাকে বসতে দেওয়ার অনুরোধ করেন। তবে তাকে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। তার মুঠোফোন কেড়ে নিয়ে পুনরায় তল্লাশি করা হয়। দুই ঘণ্টা ধরে এভাবে মানসিক নির্যাতনে ওই ছাত্রী অসুস্থ বোধ করলে তাকে কক্ষে পাঠানো হয়। এর পরপরই তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। পরে গভীর রাতে তাকে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
নির্যাতনে অসুস্থ হয়ে পড়া ছাত্রীর মা রোববার (২৭ আগস্ট) দুপুরে বলেন, এ ঘটনায় দুপুর ১২টার দিকে কলেজ প্রশাসন তার মেয়ে ও অন্য এক ছাত্রীকে ডেকে ঘটনা সম্পর্কে তাদের বক্তব্য নেয়। প্রশাসন তার মেয়েকে মানসিক রোগের চিকিৎসকের কাছে পাঠায়।
ওই ছাত্রীর মা অভিযোগ করেন, নির্যাতনের শিকার দুই ছাত্রীকে কলেজ প্রশাসন থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়, তোমরা চিকিৎসা চাও, নাকি বিচার চাও? যেকোনো একটি বেছে নেওয়ার জন্য বলা হয়। আমরা বলেছি, আমরা দুটোই চাই।
নির্যাতনের শিকার ছাত্রীর মা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এখন আমার মেয়েকে মানসিক ভারসাম্যহীন প্রমাণ করার চেষ্টা করছে তারা। কলেজ প্রশাসন যখন দুই ছাত্রীর বক্তব্য নিচ্ছিল, নির্যাতনকারীরা তখন বাইরে অবস্থান করে হাসাহাসি করছিল। কলেজ প্রশাসনের এমন আচরণে আমরা হতাশ হয়েছি। মেয়ের নিরাপত্তা নিয়েও আমরা উদ্বিগ্ন।
অভিযুক্ত ছাত্রী নীলামা হাসান জুই সাংবাদিকদের বলেন, এটা মিথ্যা অভিযোগ। এ বিষয় নিয়ে কথা বলার মতো মানসিক অবস্থা আমার নেই।