মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:৩৫ পূর্বাহ্ন

ঝালকাঠিতে ডিজিটাল আইনে  প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদকের নামে মামলা।

আলোকিত স্বপ্নের বিডি
  • প্রকাশের সময় : রবিবার, ১ আগস্ট, ২০২১
ঝালকাঠিতে ডিজিটাল আইনে 
প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদকের নামে মামলা।
মোঃ জাকির সিকদার, প্রতিনিধিঃ
ঝালকাঠি প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের জেলা প্রতিনিধি অ্যাডভোকেট আক্কাস সিকদারের নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ফেসবুকে একটি কমেন্টকে কেন্দ্র করে বুধবার রাতে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শারমিন মৌসুমি কেকা বাদী হয়ে ঝালকাঠি থানায় এ মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন ঝালকাঠি প্রেসক্লাব। অবিলম্বের মামলা প্রত্যাহার করা না হলে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারি দেন প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দ। ঝালকাঠি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খুলিলুর রহমান জানান, একজনের ফেসবুকের একটি পোস্টে আক্কাস সিকদার কমেন্ট করেন। ওই কমেন্টের সূত্রধরে বুধবার রাতে মামলাটি দায়ের করা হয়। এ ঘটনা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে আওয়ামী লীগ নেত্রী সারমিন মৌসুমে কেকার বিরুদ্ধে এক নারীর চুল কাটা এবং একটি বিদ্যালয়ের শহীদ মিনার ভেঙে স্টল নির্মাণ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশ করায় তিনি আক্কাস সিকদারের ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন। চুল কাটার ঘটনায় কেকার বিরুদ্ধে ১৭ সেপ্টেম্বর ঝালকাঠির আদালতে মামলা দায়ের হয়েছিল। এরই জের ধরে সাংবাদিক নেতা আক্কাস সিকদারের নামে এ মামলা দায়ের করা হয় বলে অভিযোগ করেন প্রেসক্লাবের নেতৃবৃন্দ। মামলা দায়েরেরর ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন ঝালকাঠি প্রেসক্লাবের সভাপতি চিত্তরঞ্জন দত্ত, সহসভাপতি দুলাল সাহা, মানিক রায়, সহ সাধারণ সম্পাদক কে এম সবুজ, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক অলোক সাহাসহ সকল সদস্যবৃন্দ। ঘটনার অন্তরালে জানা যায়, ঝালকাঠির নির্যাতিত গৃহবধূ পারভীন বেগম (৩০) জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শারমিন মৌসুমী, শহর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমানসহ ৬ জনকে আসামি করে মামলাটি করেন। বাদী আরজিতে উল্লেখ করেন, গত বছরের (২০২০) ১০ জুলাই ব্যবসায়ী বোরহান উদ্দিনের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। তাঁরা ঝালকাঠি শহরের সুতালড়ির এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন। বিয়ের পর ক্ষিপ্ত হয়ে স্বামীর তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীর ভাই আনিসুর রহমান ও আওয়ামী লীগের নেত্রী শারমিন মৌসুমী কেকার নেতৃত্বে আসামিরা ৩০ আগস্ট তাঁদের ভাড়া বাসায় হামলা চালান। তাঁদের মারধর করে ২ লাখ টাকা ও তিন ভরি ওজনের স্বর্ণালংকার হাতিয়ে নেন। সেখান থেকে বেধড়ক মারধর করে আসামিরা তাঁকে (পারভীন) তুলে নিয়ে শহরের চাঁদকাঠি এলাকার একটি হোটেলের নিচে আটকে রাখেন। সেখানে গভীর রাত পর্যন্ত তাঁকে নির্যাতন ও শ্লীলতাহানি ঘটায়। একপর্যায়ে আসামিরা তাঁর মাথার চুল কেটে দেন। পরে আনিসুর ও শারমিন মৌসুমী বাদীর ভাইকে মুঠোফোনে ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে বোনকে ছাড়িয়ে নিতে বলেন। না হলে তাঁকে হত্যা করা হবে বলেও ভয় দেখানো হয়। বাদীর ভাই নুরুজ্জামান হাওলাদার পরদিন ৩১ আগস্ট দুপুরে ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ ও স্বামীর সঙ্গে  যোগাযোগ না করার শর্তে বাদীকে ছাড়িয়ে নেন। এদিকে ঝালকাঠি সুগন্ধা পৌর আদর্শ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শহীদ মিনার ভাঙচুরের ঘটনায় দ্রুত বিচার আইনে গত বছরের ২১ অক্টোবর আদালতের নির্দেশে বুধবার সকালে ঝালকাঠি থানায় মামলাটি রেকর্ড করা হয়। এ মামলায়ও আসামি করা হয় শারমিন মৌসুমি কেকাকে। জানা যায়, সুগন্ধা পৌর আদর্শ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রীতা মন্ডল বাদি হয়ে গত রবিবার বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শারমীন মৌসুমি কেকা ও শহর বিএনপি সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান তাপু, যুবমহিলা লীগ কর্মী ফতেমা শরীফসহ ১৭ জনের নামে দ্রুত বিচার আইনে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি নালিশী মামলা দায়ের করেন। বিচারক এ.এইচ.এম ইমরানুর রহমান থানার ওসিকে বাদির অভিযোগ এফআইআর হিসেবে রেকর্ডের নির্দেশ দেন। আদালতের আদেশ হাতে পেয়ে দ্রুত বিচার আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা রেকর্ড করেন ওসি। মামলা দায়েরের পরপরই তদন্ত কর্মকর্তা এসআই হযরত আলী এজাহার ভুক্ত ৩ নম্বর আসামি ফতেমা শরীফকে গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করেন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রীতা মন্ডল অভিযোগ করেন, বিদ্যালয়ের খেলার মাঠের উত্তরপূর্ব কোণায় রাস্ট্রীয় মর্যাদার প্রতীক ১৯৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে পাঁচ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছিল। গত ১৪ আগস্ট বিদ্যালয়ের সভাপতি পদ থেকে বাদ পড়া শারমীন মৌসুমি কেকা, আনিসুর রহমান তাপু ও ফতেমা শরীফের নেতৃত্বে অজ্ঞাতনামা আরও ১২/১৪ জন ব্যাক্তি খেলার মাঠের গেটের তালা ভেঙ্গে অবৈধভাবে স্কুলের কম্পাউন্ডে প্রবেশ শহীদ মিনার ভেঙে মাটির সঙ্গে গুড়িয়ে দেয়। স্থানীয় কিছু লোকজন ও কয়েকজন অভিভাবক ভাঙ্গার কারণ জানতে চাইলে ও বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে ১ ও ২ নং আসামি পিস্তল ও ৩নং আসামী দেশিয় অস্ত্র প্রদর্শন করে সকলকে সরে যেতে বাধ্য করে। এসব ঘটনায় সাংবাদিক আক্কাক সিকদারসহ একাধিক সাংবাদিক তাঁদের মিডিয়ায় নিউজ করলে ক্ষিপ্ত হয় শারমিন মৌসুমি কেকা। এর পর থেকেই সাংবাদিক আক্কাস সিকদারকে নাজেহালের জন্য মাঠে নামেন তিনি। অবশেষে ঠুনকো একটি বিষয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন তিনি।
আপনার মন্তব্য লিখুন

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ
  • © All rights reserved © 2019 alokitoswapner-bd.com - It is illegal to use this website without permission.
Design & Developed by Freelancer Zone
themesba-lates1749691102