রাজধানীর যানজট নিরসনে পরীক্ষামূলকভাবে ঘাটারচর থেকে মোহাম্মদপুর, মতিঝিল হয়ে কাচপুর পর্যন্ত রুটে ‘গ্রিন ক্লাস্টার’ কোম্পানির মাধ্যমে বাস পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামী ৭ সেপ্টেম্বর থেকে এই রুটে দুটি কোম্পানির ১৫৫টি বাস চলাচল শুরু করবে।
তবে রুটটির বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করে আগের ১৩টি রুটেরও ৩৮২টি বাস চলাচল করছে। সেই বাসগুলো বন্ধ না করে পরীক্ষামূলক রুটটি চালু করলে ফ্র্যাঞ্চাইজির উদ্যোগ কতটা সফল হবে সে প্রশ্ন তুলেছেন পরিবহন বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলছেন, বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজি মানে এক রুটে একটি কোম্পানির বাস চলবে। এতে বিনিয়োগকারী হবে আগের অন্যান্য বাস মালিকরা। থাকবে না অসুস্থ প্রতিযোগিতা। টিকিট কেটে যানজটমুক্তভাবে যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছাবেন। অর্জিত মুনাফা কোম্পানিগুলো সমানভাবে পাবে।
কিন্তু এই রুট দিয়ে অন্য রুটের বাস চলাচল নিষিদ্ধ করা হচ্ছে না। তাই গ্রিন ক্লাস্টারের সঙ্গে অন্য বাস চললে যানজট হবেই। নতুন নিয়ম অনুযায়ী প্রস্তাবিত এই রুটে পিক আওয়ারে ১০ মিনিট ও অফপিকে সর্বোচ্চ ১৫ মিনিটের ব্যবধানে বাস ছাড়তে হবে।
প্রতিটি স্পটে বাস সর্বোচ্চ দুই মিনিট করে দাঁড়াতে পারবে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা- যখন সেই রুটে ভিন্ন কোম্পানির পরিবহন ভিন্ন নিয়মে চলবে তখন চালকদের মাঝে প্রতিযোগিতা থেকে যাবে। এতে যানজট ও দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়বে। একইসঙ্গে বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজির উদ্দেশ্যও ব্যাহত হবে।
বিআরটিএ-এর রুট পারমিট ডাটা বলছে, প্রস্তাবিত এই রুটে ১৩ রুটের ৩৮২টি বাস চলছে। এর মধ্যে ৮টি রুটের ২১৭টি বাস নারায়ণগঞ্জ থেকে শুরু করে মতিঝিল-গুলিস্তান ঘুরে আবার নারায়ণগঞ্জে ফিরে যায়। অন্য ৫টি রুটের মধ্যে ১৬৫টি গাড়ি ঘাটারচর থেকে শুরু করে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত আসা-যাওয়া করে।
এ অবস্থায় ঘাটারচর থেকে ৫টি রুটের গাড়ি কাচপুর ব্রিজ পর্যন্ত চলাচলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বাকি রুটগুলো ব্ন্ধ হয়নি। পরিবহন মালিকরা জানিয়েছেন, বর্তমানে রুটগুলোতে বিআরটিএ কর্তৃক অনুমোদিত বাসগুলো অলাভজনক হওয়ায় তারা অন্য রুটে বাস চালাচ্ছেন।
ফলে প্রস্তাবিত এই বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজির পাইলট রুটে উল্লিখিত ৫টি রুটের সবগুলো (১৬৫টি) বাস নেই। তবে ঘাটারচর থেকে পূর্বদিকে সাইনবোর্ড, কাচপুর, মেঘনাঘাটসহ বিভিন্ন রুটে ৩টি কোম্পানির মোট ২০৭টি বাস মিনিবাস চলছে।
বিষয়টি নিয়ে পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সমিতির সদস্যরা কমিটির কাছে আপত্তিও জানিয়েছেন। তারা এই বাসগুলো দিয়েই পাইলট প্রজেক্ট চালানোর ব্যবস্থা করতে অনুরোধ করেন। পরে তিনটি কোম্পানি থেকে ২টি কোম্পানির ১৫৫টি বাস পরীক্ষামূলকভাবে ৭ সেপ্টেম্বর থেকে রুটে চলাচলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
জানতে চাইলে গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. শামসুল হক বলেন, ‘একটা একটা করে রুট চালু করলে সফলতা আসবে না। কারণ, অন্যান্য রুটের বাসগুলো যখন যত্রতত্র যাত্রী ওঠাবে। ভুক্তভোগী হবে এই কোম্পানিগুলো।
ক্ষতি এড়াতে নির্ধারিত স্টপেজ রেখে ভিন্ন জায়গা থেকেও যাত্রী নেওয়া শুরু করবে ওরা। এতো বাসের ভিড়ে ফ্র্যাঞ্চাইজির বাস কেউ দেখবেও না, নিয়মও মানবে না। তখন বিনিয়োগকারীরা বলবেন- এই করিডোরে অন্য বাসগুলো আইন মানছে না। তারা আমাদের যাত্রী নিয়ে নিচ্ছে। আমাকে নিয়ম মেনে যাত্রী তুলতে দিচ্ছে না। তখন নতুন কোম্পানিও ওদের মতো আচরণ শুরু করবে।’
এই বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, ‘রুট ফ্র্যাঞ্চাইজি মানে হচ্ছে এই করিডোর তোমার (নির্ধারিত কোম্পানির)। এতে আর কারও অধিকার নেই। এতে দুটি লাভ। প্রথমত-সেবার মান ভালো হবে ও হুড়োহুড়ি থাকবে না। দ্বিতীয়ত- বাস সারিবদ্ধভাবে দ্রুত যেতে পারবে। নির্দিষ্ট এই রুটে যখন অন্য বাসের অনুপ্রবেশ ঘটবে তখন বিশৃঙ্খলা দেখা দেবেই।’
তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, হাতিরঝিল প্রকল্পে অন্য কোনও বাস তো চলে না। সেখানে বিনিয়োগকারীরা এককভাবে সুন্দর সেবা দিয়ে যেতে পারছেন। জানতে চাইলে কমিটির সদস্য ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা পর্যালোচনা করেছি।
রুটটির জন্য যে দুটি কোম্পানি নির্ধারণ করে দেবো তারাই হবে এর অথরাইজড। বাকিরা এ রুট ব্যবহার করে অন্যত্র যেতে পারবে। ওভারল্যাপিং পারমিশন দেবো।’ মেয়র বলেন, ‘কিছু সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধান নেই। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি সিটির বাস সিটিতেই থাকবে।