সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা তদন্তে কমিশন গঠন। ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে দুই গাড়ির সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ৫। ময়মনসিংহে পাচারের সময় মানব কঙ্কাল উদ্ধার, গ্রেপ্তার- ২। কোকোর স্মৃতিতে ৮ দলীয় ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত। বাগেরহাটে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লটারি পদ্ধতি বাতিলের দাবীতে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন। বঙ্গবন্ধু রেল সেতুর নাম পরিবর্তন। কালিহাতীতে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ট্রাকসহ ৬ ডাকাত গ্রেফতার। বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসম্মত শিক্ষক প্রয়োজনঃ ড. আবুল কাশেম। বাংলাদেশি রোগী পেতে সীমান্তে মেট্রো চালু করবে ভারত। ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের ৪ স্পটে দুর্ঘটনার কবলে ১০ গাড়ি, নিহত ১, আহত ১৫।

ই-ভ্যালি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন।

আলোকিত স্বপ্নের বিডি
  • প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার, ২৪ জুন, ২০২১

বাংলাদেশ ব্যাংক গত সপ্তাহে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-ভ্যালি ডটকম লিমিটেডের ওপর একটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে। আট পৃষ্ঠার প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আজ (২৪ জুন) বিকালে বৈঠকও ডাকা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদনটি পাঠায়। পর্যবেক্ষণগুলো পর্যালোচনা করে কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানা গেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিবেদনটি তৈরি করে। ব্যাংকের ছয় কর্মকর্তার একটি দল পাঁচদিন ব্যাপী পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করেছে।

পরিদর্শন টিমের দলনেতা ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের উপ-মহাব্যবস্থাপক। সদস্য ছিলেন একজন যুগ্ম পরিচালক, তিনজন উপ-পরিচালক ও একজন প্রোগ্রামার। পরিদর্শন দলকে বিভিন্ন তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল, নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ আরিফুল্লাহ খান, সান সারওয়ার চৌধুরী ও মুরাদ হাসান খুরশীদ এবং ইভ্যালির চিফ মার্কেটিং কর্মকর্তা আরিফ আর হোসাইন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রথম দিন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইভ্যালির কার্যক্রম বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন কর্মকর্তাদের দেখান।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ই-ভ্যালি লোকসানে পণ্য বিক্রি করছে। এর ফলে ই-কমার্স ব্যবসায় অসুস্থ প্রতিযোগিতা তৈরির আশঙ্কা রয়েছে। এতে সৎ ই-কমার্স ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এবং এক সময় এ খাতের প্রতি মানুষের আস্থা কমে যাবে।

অগ্রিম পণ্যমূল্য নিয়ে ও উচ্চহারে ছাড় দিয়ে ই-ভ্যালি গ্রাহকদের অর্থকে ঝুঁকিতে ফেলেছে বলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শক দলের কাছে মনে হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গ্রাহকের কাছে এবং পণ্য উৎপাদনকারী বা সরবরাহকারীদের কাছে বকেয়া বাড়ছে কোম্পানিটির। কোম্পানিটি চলতি দায় ও লোকসানের দুষ্টচক্রে বাধা পড়েছে। ক্রমাগতভাবে এমন দায় তৈরি হয়েছে যে প্রতিষ্ঠানটির অস্তিত্ব টিকে না থাকার ঝুঁকিও তৈরি হচ্ছে।

আরও বলা হয়েছে, প্রথম বছর কোম্পানিটির নিট লোকসান হয় ১ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। গত ১৪ মার্চ প্রতিষ্ঠানটির পুঞ্জীভূত লোকসান বেড়ে দাঁড়ায় ৩১৬ কোটি টাকায়। আগের দায় পরিশোধ ও লোকসান আড়াল করার জন্য কোম্পানিটি ‘সাইক্লোন’, ‘আর্থকোয়েক’ নামের আকর্ষণীয় অফার দিয়ে যাচ্ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্রয়াদেশের ৪৫ কর্মদিবসের মধ্যে পণ্য সরবরাহে ব্যর্থ হলে কোনও কোনও ক্ষেত্রে গ্রাহককে তার পরিশোধিত মূল্যের পরিবর্তে পণ্যটির বাজারমূল্য ফেরত দিচ্ছে। তাই বিপুলসংখ্যক গ্রাহক বেশি অর্থ ফেরত পাওয়ার আশায় ই-ভ্যালির প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন। অদূর ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠানটির দেনা কাটিয়ে ওঠার কোনও গ্রহণযোগ্য পরিকল্পনা বা সম্ভাবনা দেখতে পায়নি বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শক দল।

 

গ্রাহকের ২১৪ কোটি টাকা

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী গত ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ই–ভ্যালির গ্রাহক ছিল ৪৪ লাখ ৮৫ হাজার। একই সময়ে প্রতিষ্ঠানটির দেনা দাঁড়ায় ৪০৩ কোটি টাকায়। চলতি সম্পদ ছিল মাত্র ৬৫ কোটি টাকা। এই সম্পদ দিয়ে কোনও অবস্থাতেই কোম্পানিটি দায় পরিশোধ করতে পারবে না। এ ছাড়া পণ্যমূল্য বাবদ গ্রাহকদের কাছ থেকে অগ্রিম ২১৪ কোটি টাকা নিয়েও পণ্য সরবরাহ করেনি ই–ভ্যালি। আবার যেসব কোম্পানির কাছ থেকে ই-ভ্যালি পণ্য কিনেছে, তাদের কাছেও এর বকেয়া পড়েছে ১৯০ কোটি টাকা। চলতি সম্পদ দিয়ে বকেয়া অর্থের মাত্র ১৬ শতাংশ পরিশোধ করা সম্ভব।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অনলাইনভিত্তিক কোম্পানিটির মোট গ্রাহক ৪৪,৮৫,২৩৪ জন। ক্রয়াদেশ বাতিল, ক্যাশব্যাক, বিক্রিত গিফটকার্ডের সমন্বয়ে এসব গ্রাহকদের ইভ্যালি ভার্চুয়াল আইডিতে মোট ৭৩.৩৯ কোটি টাকা মূল্যমানের ই-ভ্যালু সংরক্ষিত ছিল। অথচ ওই দিন শেষে ইভ্যালি ডট কম লিমিটেডের ১০টি ব্যাংক হিসাবে ছিল ২ কোটি ৪ লাখ টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, অস্বাভাবিক ব্যয়ের বিষয়ে সন্তোষজনক কোনও ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। আর্থিক ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য দিতে বললেও বারবার সময় চায় ই-ভ্যালি কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শকেরা দেখতে পেয়েছেন, অতীতের একটি নির্দিষ্ট তারিখের তথ্য নেই কোম্পানিতে। এর গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যাও দিতে পারেনি।

 

একজনের বেতন আট লাখ!

ইভ্যালির পরিশোধিত মূলধন এক কোটি টাকা। এর মধ্যে ই-ভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেলের মালিকানা ৪০ শতাংশ এবং তার স্ত্রী চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের ৬০ শতাংশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিপুল লোকসানে থাকলেও এমডি প্রতি মাসে সাড়ে চার লাখ এবং চেয়ারম্যান প্রতি মাসে পাঁচ লাখ টাকা হারে বেতন নিচ্ছেন। এর বাইরে কোম্পানিতে কিছু কর্মকর্তা উচ্চহারে বেতন পান। এমন কর্মকর্তাও আছেন যিনি মাসে আট লাখ টাকা বেতন পান। কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলিয়ে ফেব্রুয়ারি মাসে বেতন পেয়েছেনে ৬২৬ জন।

ব্যাংক বিবরণী সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায়ই নগদ অর্থ উত্তোলন করা হয়েছে। ব্র্যাক ব্যাংকে থাকা একটি হিসাবের এক বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে নগদ টাকা তুলেছেন হিসাবরক্ষক। এভাবে নগদ অর্থ তোলা ঝুকিঁপূর্ণ। আবার একই পরিমাণ অর্থ বারবার ডেবিট দেখানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইভ্যালি বাংলাদেশ ব্যাংকের সরাসরি নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠান না হওয়ায় একে নির্দেশনা দেওয়ার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা আছে। এ ধরনের পরিদর্শনের মাধ্যমে আর্থিক ব্যবস্থাপনার ত্রুটি সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যেতে পারে। ত্রুটির ব্যাপকতা নিরূপনের জন্য দরকার নিরপেক্ষ নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সামগ্রিক নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইভ্যালির দেওয়া অল্প তথ্যের ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদনটি তৈরি। কোম্পানিটির তথ্যভাণ্ডারে অনুসন্ধান চালানোর সুযোগ না দেওয়ায় গ্রাহক ও যেসব প্রতিষ্ঠান থেকে পণ্য এনে দেওয়া হয়, সেগুলোর প্রকৃত তথ্য সংগ্রহ করা ও সঠিকতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

 

এক টাকার জন্য সাড়ে তিন টাকা

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ২০২০ সালের জুলাই থেকে গত ১৪ মার্চ পর্যন্ত ইভ্যালির মোট আয় (রেভিনিউ) ২৮.৫৪ কোটি টাকা। এই সময়ে কোম্পানিটির সেলস ব্যয় ২০৭ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংক উল্লেখ করেছে, কোম্পানিটি প্রতি এক টাকা আয়ের জন্য তিন টাকা ৫৭ পয়সা ব্যয় করেছে বলে স্টেটমেন্টে প্রদর্শন করেছে এবং এই অস্বাভাবিক ব্যয়ের বিষয়ে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, গ্রাহকের কাছ থেকে অগ্রিম হিসেবে নেওয়া অর্থ কোনও লাভ-ক্ষতি বা কমিশন হিসাব করা ছাড়াই ইভ্যালি উচ্চহারে পরিচালন ও বিপণনে ব্যয় করছে।

আপনার মন্তব্য লিখুন

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ
  • © All rights reserved © 2019 alokitoswapner-bd.com - It is illegal to use this website without permission.
Design & Developed by Freelancer Zone
themesba-lates1749691102