সোমবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৩৩ অপরাহ্ন

বিজয়ের ৪৯ বছর পাকবাহিনীকে শর্তহীন আত্মসমর্পণের আহ্বান জেনারেল মানেকশর

আলোকিত স্বপ্নের বিডি
  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২০
আলোকিত স্বপ্নের বিডি ডেস্ক//পাকিস্তানের  কারাগারে বন্দি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে চলা বাঙালির মুক্তিসংগ্রাম বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে। ইতোমধ্যে মিত্রবাহিনীর সহায়তা নিয়ে দেশের অধিকাংশ এলাকা মুক্ত করে ফেলেছেন মুক্তিযোদ্ধরা।
সোভিয়েত ইউনিয়নের হুমকিতে পাকিস্তানের সহযোগী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম নৌবহরের যুদ্ধে অংশ নেয়ার প্রস্তুতি থেমে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে পাকিস্তানি বাহিনী বুঝে যায়, তাদের পরাজয় নিশ্চিত। তাই তারা আত্মসমর্পণের কথা ভাবছিল। কিন্তু নিশ্চিত হতে চাচ্ছিল, আত্মসমর্পণের সময় তাদের হত্যা করা হবে না।

একাত্তরের ১৫ ডিসেম্বর। দেশের অধিকাংশ রণাঙ্গনে মুক্তিকামী জনতার বিজয়োল্লাস। নদীনালা, খালবিলসহ নানা প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে ইতোমধ্যে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত যৌথ বাহিনী চারদিক থেকে ঘিরে ফেলায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে ঢাকা। পার্শ্ববর্তী এলাকায় বিভিন্ন পাক বাহিনীর স্থাপনায় ভারতীয় মিগের একের পর এক বোমাবর্ষণ চলছে। স্থলপথে চলছে মিত্রবাহিনীর আর্টিলারি আক্রমণ। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে পাক বাহিনী।

পাকিস্তানি জেনারেল নিয়াজির দেয়া যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে ১৫ ডিসেম্বর বিকালে জেনারেল মানেকশ জানিয়ে দেন, শর্তহীন আত্মসমর্পণ না করলে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সম্মতি দেয়া হবে না। প্রস্তাবের প্রতি মিত্রবাহিনীর আন্তরিকতার নিদর্শন হিসেবে ওইদিন (১৫ ডিসেম্বর) বিকাল ৫টা থেকে ১৬ ডিসেম্বর সকাল ৯টা পর্যন্ত ঢাকার ওপর বিমান হামলা বন্ধ রাখা হবে বলে পাকিস্তানি জেনারেলকে জানিয়ে দেয়া হয়।

এমনকি আত্মসমর্পণ করলে মিত্রবাহিনী কোনো প্রতিশোধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়াবে না বলেও আশ্বস্ত করা হয়। তবে পাকিস্তানি জেনারেলকে হুশিয়ার দিয়ে বলা হয়, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শর্তহীন আত্মসমর্পণ না করলে ১৬ ডিসেম্বর সকাল ৯টা থেকে সর্বশক্তি নিয়ে আক্রমণ করা ছাড়া মিত্রবাহিনীর কোনো পথ থাকবে না।

জেনারেল নিয়াজি তাৎক্ষণিক বিষয়টি পাকিস্তান সদর দফতরকে অবহিত করেন। পরিস্থিতির ভয়াবহতা উপলব্ধি করে ১৫ ডিসেম্বর গভীর রাতে পাকিস্তানের তদানীন্তন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ঢাকায় জেনারেল নিয়াজিকে নির্দেশ দেন যে, ভারতের সেনাবাহিনী প্রধান পাকিস্তানিদের আত্মসর্মপণের জন্য যেসব শর্ত দিয়েছেন, যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার জন্য তা মেনে নেয়া যেতে পারে। নিয়াজি তাৎক্ষণিক তা ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল মানেকশকে অবহিত করেন। দিনটি মূলত দখলদার বাহিনীর চূড়ান্ত আত্মসমর্পণের দিনক্ষণ নির্ধারণের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়।

এদিন ঢাকার বাসাবোয় এস ফোর্সের মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর তীব্র আক্রমণ চালায়। জয়দেবপুরেও মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপক আক্রমণে পর্যুদস্ত হয় তারা। টঙ্গী, ডেমরা, গোদাইনাল ও নারায়ণগঞ্জে মিত্রবাহিনীর আর্টিলারি আক্রমণে বিপর্যস্ত হয় দখলদার বাহিনী। এদিন সাভার পেরিয়ে গাবতলীর কাছাকাছি নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান নেয় মিত্রবাহিনীর একটি ইউনিট। ভারতীয় ফৌজের একটি প্যারাট্রুপার দল পাঠিয়ে ঢাকায় মিরপুর ব্রিজের পাকিস্তানি ডিফেন্স লাইন পরখ করে নেয়া হয়।

রাতে যৌথ বাহিনী সাভার থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। পথে কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে কাদেরিয়া বাহিনী ভারতীয় ও বাংলাদেশ বাহিনীর সঙ্গে যোগ দেয়। রাত ২টার দিকে যৌথ বাহিনী পাক সেনাদের মুখোমুখি হয়। যৌথ বাহিনী ব্রিজ দখলের জন্য প্রথমে কমান্ডো পদ্ধতিতে আক্রমণ শুরু করে। ব্রিজের ওপাশ থেকে পাক বাহিনী মুহুর্মুহু গোলাবর্ষণ করতে থাকে।

এ সময় যৌথ বাহিনীর আরেকটি দল এসে পশ্চিম পাড় দিয়ে আক্রমণ চালায়। সারা রাত তুমুল যুদ্ধ চলে। এদিকে রণাঙ্গনে মুক্তিবাহিনী কুমিরার দক্ষিণে আরও কয়েকটি স্থান হানাদারমুক্ত করে। সন্ধ্যায় মুক্তিযোদ্ধারা চট্টগ্রাম শহরের ভাটিয়ারিতে আক্রমণ চালায়।

সারা রাত মুক্তিবাহিনী ও পাক বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ চলে। ভাটিয়ারি থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত রাস্তায় রাস্তায় যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে। এদিন বগুড়া জেলা ও পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি শত্রুমুক্ত হয়।

আপনার মন্তব্য লিখুন

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ
  • © All rights reserved © 2019 alokitoswapner-bd.com - It is illegal to use this website without permission.
Design & Developed by Freelancer Zone
themesba-lates1749691102