নিজের দেশকে বাঁচাতে অস্ত্র নয়, গানকেই হাতিয়ার করেছিল ছোট্ট ছেলেটি। গাজার মৃত্যুপুরীতে দাঁড়িয়ে কাঁপা গলায় নয়, বরং ভরাট কণ্ঠে গেয়ে যেত— যেন গানই ছিল তার প্রতিবাদের ভাষা। সেই শিশুশিল্পী হাসান আলা আয়াদ আর নেই। ইসরায়েলের চালানো বিমান হামলায় শহীদ হয়েছেন গাজার এই কণ্ঠসৈনিক।
মাত্র ১৪ বছর বয়সী এই শিশুটি গাজার নুসাইরাত শরণার্থী ক্যাম্পে থাকতেন। গত ৫ নভেম্বর, ইসরায়েলি বাহিনীর বিমান হামলায় প্রাণ হারান আয়াদ। তার মৃত্যুতে স্তব্ধ গাজা, শোকে কাতর প্যালেস্টাইন।
গান দিয়ে গাজার কণ্ঠ হয়ে উঠেছিল আয়াদ
হাসান আয়াদ কেবল গান গাইতেন না— তার গান ছিল প্রতিবাদের, বেঁচে থাকার, এবং স্বপ্ন দেখানোর গল্প। কণ্ঠে ছিল ভয়হীনতা ও বেদনার ছোঁয়া। যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় দাঁড়িয়ে আয়াদ গেয়েছিলেন গাজার শহীদদের জন্য, অনাথ শিশুদের মুখে হাসি ফোটাতে শোনাতেন আশার সুর।
রিফিউজি ক্যাম্পে আয়াদের গান ছিল একমাত্র বিনোদন। শতশত ভিডিও ভাইরাল হয় সামাজিক মাধ্যমে। অনেকেই বলেন, “ওর কণ্ঠে ছিল বেঁচে থাকার ডাক।”
বাবার কাঁধে ভেঙে পড়েছে আকাশ
ছেলের মৃত্যু যেন মেনে নিতে পারছেন না আয়াদের বাবা। প্যালেস্টাইন ক্রনিকলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন,
“আমার সন্তান যে এভাবে চলে যাবে, তা ভাবতেও পারিনি। সে তো সবাইকে ভালোবাসত। শুধু গান গাইত, কারও ক্ষতি করত না।”
শুধু আয়াদের পরিবার নয়, পুরো গাজা আজ শোকে মুহ্যমান। ছোট্ট এই কণ্ঠসৈনিকের মৃত্যু যেন গাজার হৃদয়কেই স্তব্ধ করে দিয়েছে।
শেষ গানটি উৎসর্গ করেছিলেন গাজার জন্য
ফিলিস্তিনি চলচ্চিত্র পরিচালক রশিদ মাশারাওয়ি জানান, আয়াদ তার নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র ‘জিরো ডিসটেন্স’-এর জন্য একটি গান গেয়েছিল।
“হাসান আয়াদ, যে শিশুটি আমাকে গাজা থেকে একটি গান উৎসর্গ করেছিল, সে আজ শহীদ হয়েছে,”—বলেন মাশারাওয়ি।
আয়াদের মৃত্যু যেন আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, গাজার শিশুরা আজ কেবল হামলার লক্ষ্য নয়, তারা বিশ্ব বিবেককে নাড়িয়ে দেওয়ার বার্তাবাহকও।