মঙ্গলবার, ০১ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৩২ অপরাহ্ন
শিরোনাম :

পানিতে ভেসে গেল উপকূলের ঈদ আনন্দ, ১৫ হাজার মানুষ বন্দি

আলোকিত স্বপ্নের বিডি
  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ১ এপ্রিল, ২০২৫

ঈদের খুশির দিনে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলায় খোলপেটুয়া নদীর বাঁধ ভেঙে আনন্দ বিষাদে পরিণত হয়েছে। উপজেলার বিছট এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে আটটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বাঁধ ভেঙে যাওয়ার দুদিন পরও বিকল্প বাঁধ নির্মাণ সম্ভব হয়নি, ফলে পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন প্রায় ১৫ হাজার মানুষ। পানির নিচে তলিয়ে গেছে ২০০ বিঘা জমির ধান, ৪ হাজার বিঘার অধিক চিংড়ি ঘের এবং প্রায় ৮০০ বসতবাড়ি।

সোমবার (৩১ মার্চ) ঈদের দিন সন্ধ্যা পৌনে ৯টার দিকে সাতক্ষীরার বিছট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশ দিয়ে খোলপেটুয়া নদীর ২০০ ফুটজুড়ে বেড়িবাঁধ ভেঙে নদীতে বিলীন হয়ে যায়। স্থানীয় বাসিন্দারা স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে টানা দুই দিন বিকল্প রিং বাঁধ তৈরির চেষ্টা করলেও প্রবল জোয়ারের তোড়ে সেই বাঁধও টিকে থাকেনি। ফলে একের পর এক গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে।

পানির তোড়ে আনুলিয়া ইউনিয়নের বিছট, বল্লভপুর, আনুলিয়া, নয়াখালী, চেঁচুয়া, কাকবসিয়া, পারবিছুট ও বাসুদেবপুর গ্রাম ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

স্থানীয়রা দাবি করেছেন, মৎস্য ঘেরে লবণ পানি চলাচলের জন্য পাইপলাইন স্থাপন করায় বেড়িবাঁধের নিচের মাটি দুর্বল হয়ে পড়েছিল, যা বাঁধ ধসের অন্যতম কারণ।

ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) আশাশুনি উপজেলা টিম লিডার আবদুল জলিল বলেন, ‘আমরা যখন নামাজরত অবস্থায় ছিলাম, তখন হঠাৎ শুনলাম বাঁধ ভেঙে গেছে। মোনাজাত শেষ না করেই ছুটে যাই। গ্রামবাসী মিলে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করলেও দুপুরের জোয়ারের পর সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘মূল ভাঙন পয়েন্টে একটি পাইপলাইন ও গেট সিস্টেম ছিল। পাইপলাইন বসানোর কারণেই বাঁধ দুর্বল হয়ে পড়েছে। যদি এ ধরনের পাইপলাইন বসানো বন্ধ না করা হয়, তাহলে ভবিষ্যতে আরও বড় বিপর্যয় ঘটবে।’

আনুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রুহুল কুদ্দুস বলেন, ‘পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ হচ্ছে। দুপুর ও রাতের জোয়ারে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। দ্রুত বেড়িবাঁধ সংস্কার করা না গেলে আরও ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড, জেলা প্রশাসন, ইউএনও, সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে এসেছেন, তবে কেবল উপস্থিত থাকলেই হবে না, দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাঁধ মেরামতে বলগেট (বালু ও মাটি বহনের জাহাজ) প্রয়োজন। ইতোমধ্যে একটি বলগেট এসেছে, তবে এটি দিয়ে কতক্ষণ কাজ চালানো সম্ভব? আরও চারটি বলগেট আনতে হবে। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ছাড়া দীর্ঘস্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়।’

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘ঈদের ছুটির কারণে শ্রমিক সংকট এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আনতে দেরি হওয়ায় কাজ শুরু করতে বিলম্ব হয়েছে। আমি সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেছি, পরিস্থিতি ভয়াবহ। যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে পরবর্তী জোয়ারে আরও আধা কিলোমিটার বাঁধ ধসে যেতে পারে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুটি বিভাগকে একসঙ্গে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয়রা আমাদের সহায়তা করছেন, আমরা যত দ্রুত সম্ভব বাঁধ মেরামতের চেষ্টা করছি।’

এখন পর্যন্ত পানিবন্দি মানুষের মধ্যে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। অনেক পরিবার উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবীরা উদ্ধারকাজ চালিয়ে গেলেও পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি।

স্থানীয়দের দাবি, দ্রুত বাঁধ মেরামত না করা হলে উপকূলীয় এই এলাকায় দীর্ঘমেয়াদি দুর্যোগ দেখা দিতে পারে।

আপনার মন্তব্য লিখুন

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ
  • © All rights reserved © 2019 alokitoswapner-bd.com - It is illegal to use this website without permission.
Design & Developed by Freelancer Zone
themesba-lates1749691102