মৌসুমী বাহারি সব সবজিতে সয়লাব বাজার। তবে হাতের নাগালে নেই দাম। বাড়তি দরে পণ্য কিনতে কিনতে ত্রাহি দশা সাধারণ মানুষের। বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, ৬০ থেকে ৮০ টাকার নিচে কোনো সবজি মিলছে না।
শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) রাজধানীর নয়াবাজার, রামপুরা বাজার ও কারওয়ান বাজারসহ বেশকটি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সবজি বাজারে থরে থরে টাটকা নানা রকমের শীতকালীন সবজি সাজিয়ে রাখা আছে। ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, সিম, বেগুনসহ নানা সবজি দেখা যায় খুচরা ও পাইকারি বাজারে। তবে তুলনামূলক তেমন কোনো ক্রেতাদের উপস্থিতি দেখা যায়নি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত সপ্তাহের তুলনায় শিম, মুলা, বেগুনসহ বেশ কয়েকটি সবজির দাম প্রতি কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা কমেছে। শীত বেশি এলে আরও কমবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন বিক্রেতারা।
গত সপ্তাহের ১০০ টাকার শিম ২০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়, ৬০ টাকার মুলা ৫০, শালগম ২০ টাকা কমে ১০০ থেকে ৮০ টাকা, আমদানি করা টমেটো ১০ টাকা কমে ১৫০, দেশি টমেটো ২০ টাকা কমে ২০০ টাকা, কাঁচামরিচ ১৬০, কম ঝাঁজালো কাঁচামরিচ ১২০, গোল বেগুন ১০ টাকা কমে ১০০, লম্বা বেগুন ৮০ টাকায় প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহের মতো পেঁপে ৫০, গাজর ১৫০, করলা ৮০ থেকে ১০০, ফুলকপি ও বাঁধাকপি ৫০, মিষ্টি কুমড়া ও পটল ৬০ ও ৮০ টাকা, কচুরমুখী ২০ টাকা বেড়ে ১০০, ঢ্যাঁড়শ, ঝিঙা, ধুন্দল ও শশা প্রতি কেজি ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া লেবুর হালি ১৫ থেকে ২৪ টাকা, পুঁইশাক ৩৫, পালং, লাল শাক ১৫ টাকা আঁটি বিক্রি হচ্ছে।
কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা রুকন বলেন, শীতকালীন সবজি বাজারে আসতে শুরু করেছে। ফলে শিম, বেগুন, কপি ও মুলার দাম কিছুটা কমেছে। অন্যদিকে কচুরমুখীর দাম বেড়েছে। তবে আশা করা যায়, ১০ থেকে ১২ দিনের মধ্যে সবজির দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আসবে।
নিউমার্কেটে বাজার করতে আসা শাহরিয়ার বলেন, এক মাস ধরে বেশিরভাগ সবজির দাম ৬০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে। ভেবেছিলাম ৫০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে সব সবজি চলে আসবে; কিন্তু দু-একটি ছাড়া বেশিরভাগ নাগালের বাইরে।
দেশের ইলিশের বাজার এখন অস্থির। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সুস্বাদু এ রুপালি মাছ। সপ্তাহ ব্যবধানে কেজিতে ৪০০-৫০০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২২০০ টাকায়। এছাড়া দেড় কেজি ওজনের ইলিশ ৩০০০ টাকা, ৭০০-৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১৯০০ টাকা হারে, আর ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১৪০০ টাকা ও ৩০০-৪০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের জন্য গুনতে হচ্ছে ৮০০-১০০০ টাকা পর্যন্ত।
বাজারে অন্যান্য মাছের দামও কিছুটা বেড়েছে। বাজারে প্রতি কেজি রুই ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা, কাতল ৪০০ থেকে ৪৮০ টাকা, চাষের শিং ৫৫০ টাকা, চাষের মাগুর ৫০০ টাকা, চাষের কৈ ২৪০ থেকে ২৮০ টাকা, কোরাল ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, টেংরা ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকা, চাষের পাঙাশ ১৮০ থেকে ২৩০ টাকা ও তেলাপিয়া ১৮০ থেকে ২২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া প্রতি কেজি বোয়াল ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, পোয়া ৪৫০, পাবদা ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, আইড় ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা, দেশি কৈ ১ হাজার ৩০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা, শিং ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা, শোল ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা এবং নদীর পাঙাশ বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়।
এদিকে সোনালি ও ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা কমলেও স্থিতিশীল রয়েছে অন্যান্য মাংস ও ডিমের দাম। কেজিতে ১০ টাকা কমে প্রতিকেজি সোনালি মুরগি ২৯০ থেকে ৩০০ টাকা ও ব্রয়লার মুরগি ১৭৫-১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া প্রতি কেজি দেশি মুরগি ৫৫০-৬০০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৩০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকায়। আর জাতভেদে প্রতি পিস হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৫৫০-৬০০ টাকায়।
মুরগি ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে সরবরাহ বাড়ায় কমেছে ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম। রাজধানীর কারওয়ানবাজারের মুরগি ব্যবসায়ী হাকিম বলেন, বাজারে সরবরাহ বেড়েছে। এতে দাম কমেছে। তবে ইতোমধ্যে বিয়ের মৌসুম শুরু হয়ে গেছে; দাম কতদিন কম থাকবে বলা যাচ্ছে না। চাহিদা বাড়লে দামও বেড়ে যেতে পারে।
এদিকে শুল্ক ছাড়ের এক মাস পর কমতে শুরু করেছে চিনি ও ডিমের দাম। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ১৯ কোটি ডিম আমদানির খবরে ৫ টাকা কমে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ টাকায়। প্রতি কেজি চিনি ১২০-১২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্যাকেট চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায়।
ব্যবসায়ীরা বলেন, ডিম আমদানির পর থেকে আড়ত মালিকরা কমদামে ডিম বিক্রি করতে শুরু করেছেন। অন্যদিকে চিনির আমদানিতে শুল্ক কমানোয় মিলে চিনির দাম কমেছে। ফলে বাজারেও এর প্রভাব দেখা যাচ্ছে।
এদিকে সপ্তাহজুড়ে ১৩০ টাকা কেজিতে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হলেও ৫ টাকা কমেছে এ পণ্যের দাম। বর্তমান বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ১২৫ এবং ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১১০ টাকা। তবে নতুন আলু বাজারে এলেও দাম কমেনি এ পণ্যটির। আগের মতো পুরান আলু ৭৫-৮০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি নতুন আলু ১০০ থেকে ১২০ টাকা।
চালের বাজার ঘুরে দেখা যায়, নতুন পাইজাম ও আটাশ চাল বাজারে আসতে শুরু করেছে। তবে পর্যাপ্ত পরিমাণে না আসায় বাজারে তেমন প্রভাব পড়েনি, আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে চাল।
নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের দাবি ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েরই। ক্রেতারা বলছেন, নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হয় না। এতে বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম বাড়ানোর সুযোগ পান।
আর বিক্রেতারা বলছেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছেন। বাজারে নিয়মিত অভিযান চালালে অসাধুদের দৌরাত্ম্য কমবে।