কয়রায় ড্রামের ভেলায় পার হয়ে বিদ্যালয়ে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা সুন্দরবন উপকূলের জনপদ কয়রা উপজেলার দুর্ভোগ দুর্যোগের শেষ নেই।প্রলয়কারী ঘূর্ণিঝড় আইলার ক্ষত এখনও বয়ে বেড়াচ্ছে উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের মঠবাড়ি গ্রামের বাসিন্দারা।ঘূর্ণিঝড় আইলার পানির তীব্র স্রোতে সুন্দরবনের পাশে শাকবাড়িয়া নদীর বাঁধ ভেঙে দীর্ঘদিন জোয়ার-ভাটার ফলে মঠবাড়ি গ্রামে লোকালয়ে তৈরি হয় একটি খাল।এক বছর গ্রামের মানুষের প্রাণপণ চেষ্টার পর বাঁধ মেরামত হলেও খালটি ভরাট করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
উপজেলার মহারাজপুর পাবলা খালে ঘূর্ণিঝড় আইলার পর ১৫ বছর ধরে পারাপারে জনদুর্ভোগ চরমে।বিশেষ করে তিন গ্রামের শিক্ষার্থীরা ভেড়ায় চরে মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাতায়াত করে। গ্রামের একমাত্র কমিউনিটি ক্লিনিকও খালের একপাশে হওয়ায় দুর্ভোগের শেষ নেই মঠবাড়ি গ্রামের সাধারণ মানুষের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,পবলা খালের পশ্চিম পাড়ে প্রতাপ স্মরণী মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মঠবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এছাড়া একটি কমিউনিটি ক্লিনিকও রয়েছে সেখানে। প্রথম দিকে খালের অন্য পাড় থেকে বিদ্যালয়গামী ছেলেমেয়েরা ছোট নৌকায় পারাপার হতো। কিন্তু নৌকা সব সময় পাওয়া যায় না। জেলেরা নৌকা নিয়ে সুন্দরবনে চলে গেলে কলার ভেলায় পার হতে হয় তখন। এতে ঝুঁকি ছিল বেশি। পরে প্লাস্টিকের ড্রামের ওপর কাঠের তক্তা দিয়ে স্থায়িভাবে ভেলা বানানো হয়। প্লাস্টিকের ড্রাম চারকোনা করে বেঁধে ওপরে তক্তার পাটাতন বিছিয়ে তৈরি করা হয়েছে বিশেষ এই ভেলা। খালের দুই পাশে একটি লম্বা রশি আড়াআড়িভাবে খুঁটির সঙ্গে টানিয়ে রাখা হয়েছে। লোকজন ভেলায় চড়ে নিজেরাই রশি টেনে পারাপার হচ্ছে। সেখানকার বাসিন্দাদের উপজেলা সদরে যেতে হয় ভেলায় খাল পেরিয়ে। প্রায় ৪ হাজার জনসংখ্যার বড় এই গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া শাকবাড়িয়া নদী পেরিয়ে সুন্দরবন। রয়েছে একটি বাজার ও ফরেস্ট স্টেশন। খালের পূর্ব পাড়ে সুপেয় পানির সংকট থাকায় বাসিন্দারা ভেলায় খাল পেরিয়ে পশ্চিম পাড় থেকে পানি নিয়ে আসে।
মঠবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ছেলেমেয়েরা বই নিয়ে বাড়ি যাওয়ার সময় একটা দুর্ঘটনা ঘটে। ভেলায় পার হওয়ার সময় উল্টে শিক্ষার্থীরা খালে পড়ে যায়। আশপাশের লোকজন এসে ছোট ছোট শিশুদের উদ্ধার করলেও তাদের বইগুলো ভিজে যায়। তিন শতাধিক শিক্ষার্থী প্রতিদিন খাল পার হয়ে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করে। অভিভাবকেরা শিক্ষার্থীদের খাল পারাপার নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকেন।
স্থানীয় গ্রামের বাসিন্দা আনিছুর রহমান বলেন,বর্ষাকালে খালের ওপর ড্রামের ভেলা দিয়ে পারাপারে খুবই বিপজ্জনক।আইলার পর থেকে শুনছি খালের উপর ব্রিজ হবে, ১৫ বছর হয়ে গেলেও ব্রিজ হলো না।খাল পাড় হয়ে স্কুলে যাতায়াত শিক্ষার্থীরা প্রায় পারাপারে ভোগান্তিতে পড়ে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আবু সাইদ বলেন,এলাকার মানুষের খাল পারাপারে দুর্ভোগ সীমাহীন বিশেষ করে দৈনন্দিন প্রয়োজনে খাল পার হয়ে উপজেলা সদরে যাতায়াত করতে হয়। খালে একটি ভেড়া আছে যা দিয়ে শিক্ষার্থী ও এলাকার মানুষ কষ্টে খাল পার হয়। পারাপারে ভোগান্তি লাঘবে খালের ওপর একটি ব্রিজ হলে এই এলাকার কয়েক হাজার মানুষ নিরাপদ যোগাযোগের সুযোগ পাবে।