সেন্টমার্টিনের সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য অক্ষুণ্ণ রাখতে কুকুরের আধিক্য নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিয়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন।
শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) বিকেলে সেন্টমার্টিন সৈকতের জেটিঘাটে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধান ও টেকনাফ উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় এ কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। এর উদ্বোধন করেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী।
বিদ্যানন্দের এ কর্মসূচির পাইলট ফেইজে প্রায় ২০০ কুকুরকে বন্ধ্যাকরণ করা হবে। এ ফেইজে সফল হলে পরবর্তীতে বাকি কুকুরগুলোরও বন্ধ্যাকরণের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপে প্রায় হাজার খানেক কুকুর বিচরণ করছে। ছোট দ্বীপটির লোকসংখ্যা অনুপাতে খুবই বেশি। মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন বলে কুকুরগুলো অন্য এলাকায় যেতে পারে না। অত্যধিক কুকুরের কারণে সৈকতে মা কাছিম ডিম পাড়তে আসে না। কোনো কাছিম এলেও অনেক সময় কুকুরের খাবারে পরিণত হয়। আবার আক্রমণের ভয়ে অনেক সময় স্থানীয় ও পর্যটকরা কুকুরের প্রতি নির্দয় আচরণ করে।
তিনি আরও বলেন, দেশের অন্য এলাকার কুকুরের চেয়ে সেন্টমার্টিনের কুকুর আলাদা। এখানকার কুকুরগুলোর স্বাভাবিক প্রজনন হার অনেক বেশি এবং ছানার মৃত্যুহারও কম। তাই অনিয়ন্ত্রিত কুকুর বৃদ্ধিতে দ্বীপের সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য, স্বাভাবিক বাস্তুসংস্থানের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার পক্ষে ক্রমশ বড় হুমকি হয়ে উঠছে। দ্বীপের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় কুকুরের বন্ধ্যাত্মকরণ কর্মসূচি হাতে নিয়ে ঢাকার তিনজন রেজিস্টার্ড ভেটেরিনারি ডাক্তার, পাঁচজন ভেটেরিনারি সহকারী, ও বিদ্যানন্দের ২৫ জন প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবকের টিম দ্বীপে বেশ কিছুদিন ধরে কাজ করছেন।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের বোর্ড সদস্য মো. জামাল উদ্দিন বলেন, কুকুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে তাদের নৃশংস নিধন কিংবা অপসারণ কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। কুকুর নিধন, অপসারণের কাজটি বেশ অমানবিক, বিপদজনক। এটি পরিবেশ দূষণ ও রোগ সংক্রমণের বড় কারণ। এভাবে সংখ্যাটা আপাতত কমছে মনে হলেও পরবর্তীতে উল্টো বেড়ে যায়। কুকুর নিধন কিংবা অপসারণ বৈজ্ঞানিকভাবে অকার্যকর প্রমাণিত।
তিনি আরও বলেন, উদ্ভূত এসব সমস্যা নিরসনে একমাত্র বন্ধ্যাকরণেই সেন্টমার্টিনে কুকুরের সংখ্যাধিক্য হ্রাস ও নিয়ন্ত্রণের টেকসই এবং বিজ্ঞানসম্মত সমাধান। পাশাপাশি কুকুরগুলোর দায়িত্বশীল অভিভাবকত্ব/মালিকানা প্রসারণ, সুষ্ঠু খাদ্যবর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং অন্যত্র অ্যাডপশন প্রয়োজন। এ কারণে আন্তর্জাতিক প্রাণিকল্যাণ স্ট্যান্ডার্ড মেনে সেন্টমার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষার দায়িত্বশীল ভূমিকা নিয়েছে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন, কক্সবাজার জেলা ও টেকনাফ উপজেলা প্রশাসন। কর্মসূচির পাইলট ফেইজে প্রায় ২০০ কুকুরকে বন্ধ্যাকরণ করণের পর সফলতা এলে পরবর্তীতে বাকি কুকুরগুলোও বন্ধ্যাকরণের আওতায় আনা হবে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের চমৎকার এ উদ্যোগে দ্বীপের কুকুরগুলো বন্ধ্যাকরণের আওতায় এলে সেন্টমার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সহায়ক ভূমিকা রাখবে। প্রশাসন এ উদ্যোগে সব ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছে। দেশের কল্যাণে শুধু সরকারই ভালো উদ্যোগ নেয়, এমনটি না- প্রতিষ্ঠান ও পেশাগত মেধায় দেশের কল্যাণে উদ্যোগ নেওয়া যায়। বিদ্যানন্দের এ প্রকল্প তারই উদাহরণ।