পুলিশ বলছে খুঁজে পাচ্ছিনা
আসামী নিজ বাড়িতে খেলছে তাস!
রাহাদ সুমন,বানারীপাড়া(বরিশাল)প্রতিনি
বরিশালের বানারীপাড়ায় এক বিধবা নারীকে দু’দফা হত্যা প্রচেষ্টা মামলার প্রধান আসামীকে পুলিশ খুঁজে না পেলেও সে নিজ বাড়িতে অবস্থান করে প্রতিদিন তাসের আসর বসায় বলে অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, উপজেলার ইলুহার ইউনিয়নের পূর্ব মলুহার গ্রামে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে মৃত ভাইয়ের বিধবা স্ত্রীকে দু’দফা কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা চালায় দেবর । এ ঘটনায় পৃথক দুটি হত্যা প্রচেষ্টা মামলা দায়ের করা হয়। মামলার প্রধান আসামী পূর্ব মলুহার গ্রামের মৃত ওহাজ উদ্দিনের ছেলে জামাল হাওলাদার (৪৫) তার নিজ বাড়িতে অবস্থান করে বীর দর্পে এলাকায় ঘুরে বেড়িয়ে মামলা তুলে নিতে বাদীকে হুমকি ধামকি দেওয়ার পাশাপাশি সে নিজ ঘর ও বাড়ির পাশের বাগান এবং রাস্তায় প্রকাশ্যে তাসের আসর বসাচ্ছে। এ বিষয়ে বরিশাল জেলা পুলিশ সুপারের কাছে মামলার বাদী একই এলাকার মৃত নুরুল হক হাওলাদারের স্ত্রী জেসমিন বেগম লিখিত অভিযোগ করেন। পুলিশ সুপার বানারীপাড়া থানার ওসিকে এ ব্যপারে আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে তাকে জানাতে নির্দেশ দেন। তবে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা থানার উপ-পরিদর্শক মঞ্জুর ইসলাম আসামীকে খুঁজে পাচ্ছেন না। বাদীর অভিযোগ আসামীদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে ইচ্ছে করেই তাদের গ্রেফতার করছেন না এ পুলিশ কর্মকর্তা। অভিযানের আগেই ফোন করে আসামীদের সরে থাকতে বলা হয়। অবশ্য এ অভিযোগ অস্বীকার করে থানার উপ-পরিদর্শক মঞ্জুর ইসলাম বলেন ৩০ জুলাই ৮ আসামীর বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশীট দাখিল করা হয়েছে। এদের মধ্যে জামাল হাওলাদার ছাড়া বাকী ৭ জন জামিনে রয়েছেন। প্রধান আসামীকে গ্রেফতার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। মামলার বাদী জানান, তার স্বামীর মৃত্যুর পরে ৫ মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে তিনি অসহায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এ অবস্থায় স্বামীর রেখে যাওয়া সহায়-সম্পত্তির ওপরে লোলুপদৃষ্টি পড়ে তার দেবর জামালের। বিভিন্ন সময় সম্পত্তি দখলের পায়তারায় তাকেসহ সন্তানদের অব্যাহত হুমকি ও প্রাণে মেরে ফেলার হুংকার দিয়ে আসছে সে। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে বাদীর ঘরের সামনে গিয়ে জামাল গংরা হুমকিসহ বিভিন্ন কুরুচিপূর্ণ কথা বলতে থাকে। জেসমিন বেগম এর প্রতিবাদ করলে তাকে খুন জখম করার চেষ্টা চালায়। এ সময় তার ডাকচিৎকারে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে আসলে তিনি রক্ষা পান। ৯ ফেব্রুয়ারি জেসমিন বেগম বাদী হয়ে বরিশাল বিজ্ঞ এক্সিকিউটিভ ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে জামাল হাওলাদারসহ আরও ৫ জনকে বিবাদী করে ফৌজদারী কার্য়্যবিধি আইনের ১০৭/১১৭ (গ) ধারা মতে এম. পি, কেস-১৪ (২০২১) রুজু করেন। পরে ৩ মার্চ একই আদালতে ভবিষ্যতে বাদীনিকে বিবাদীরা কোন প্রকার হয়রানি করবেনা মর্মে তারা লিখিত দিয়ে আসেন। আদালতে দেওয়া লিখিত অঙ্গীকার অমান্য করে ২৭ এপ্রিল রাত ১০টার দিকে জেসমিন বেগমের বাড়ির মধ্যে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জ্বিত জামাল ও তার লোকজন প্রবেশ করে গালাগাল করতে থাকে। এক পর্যায়ে জামাল তার বিধবা ভাবী জেসমিনের মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করে তাকে গুরুতর আহত করে। এ ঘটনায় ২ মে জেসমিন বেগম বাদী হয়ে জামালকে প্রধান আসামী করে আরও ৭ জনের বিরুদ্ধে বানারীপাড়া থানায় মামলা দায়ের করেন। এই মামলা করায় ক্ষিপ্ত হয়ে জামাল ও অপর অসামীরা ২২ মে আবারও জেসমিন বেগমকে বেদম মারধর করলে থানায় মামলা করতে ব্যর্থ হয়ে তিনি ৩০ মে বানারীপাড়া আমলি আদালত,বরিশাল-এ জামাল হাওলাদারসহ আরও ৭জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহন করতে বিজ্ঞ আদালত বানারীপাড়া থানাকে নির্দেশ দিলে অফিসার ইনচার্জ মো. হেলাল উদ্দিন ২ জুন মামলাটি রুজু করেন। জেসমিন বেগম জানান, উভয় মামলায় অন্য আসামীরা জামিনে থাকলেও প্রধান আসামী জামিন না নিয়ে এলাকায় বসে মামলা তুলে নেওয়াসহ তাকে বিভিন্ন ধরণের হুমকি-ধামকি দিয়ে বেড়াচ্ছে। এমনকি সে তার নিজ ঘর, বাড়ির পাশের বাগান ও রাস্তার মধ্যে তাস খেলার আসর বসাচ্ছে নিয়মিত। তবে পুলিশ বলছে আসামীকে খুঁজে পাচ্ছেন না। গত ১৯ জুন বিধবা জেসমিন বেগম বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেন। ওই অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, তার করা মামলার আসামীরা এলাকায় প্রকাশ্যে চলাফেরা করলেও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মঞ্জুর ইসলাম তাদের গ্রেফতার করতে ওই এলাকায় যাননি। আসামীদের গ্রেফতার করারও কোন প্রকার চেষ্টা কিংবা তার সঙ্গেও কোন প্রকার যোগাযোগ করেননি। ওইদিনই পুলিশ সুপার কার্যালয় থেকে বানারীপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জকে বাদীকে আইনগত সহায়তা প্রদান করতে নির্দেশ দেন। এ প্রসঙ্গে বানারীপাড়া থানার ওসি মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, মামলার যেহেতু চার্জশীট হয়েছে এখন আদালত থেকে ওয়ারেন্ট জারি করা হলে আসামীকে গ্রেফতার করা হবে।