মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:১১ পূর্বাহ্ন

পঞ্চগড়ে মিলছে না সূর্যের দেখা, দুর্ভোগে জনজীবন।

আলোকিত স্বপ্নের বিডি
  • প্রকাশের সময় : শুক্রবার, ১২ জানুয়ারী, ২০২৪

পঞ্চগড়ে মিলছে না সূর্যের দেখা, দুর্ভোগে জনজীবন।

পৌষের শেষ দিকে এসে বেড়েছে শীতের দাপট। কুয়াশার সঙ্গে যোগ হয়েছে হিমেল হাওয়া। গত পাঁচ দিনে মেঘের আড়ালে সূর্য। রোদহীন দিনভর শীত দুর্ভোগে বিপর্যস্ত পঞ্চগড় জনপদ।

শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে ভোর ৬টায় রেকর্ড করা হয় ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। সকালে তাপমাত্রার রেকর্ডের তথ্যটি গণমাধ্যমকে জানান জেলার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ।

তিনি জানান, গত পাঁচ দিন ধরে মেঘ-কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে সূর্য। এ কারণে ঠান্ডা অনুভব হচ্ছে। গত দুই দিন ধরেই তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রির মধ্যে রেকর্ড হয়েছে। দিনের তাপমাত্রা নিম্নমুখী। গতকাল দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। উত্তর-পূর্ব বা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হওয়ার কারণে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। সে অনুপাতে এ অঞ্চলে এখন শীতের তীব্রতা বেশি হচ্ছে।

জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গত পাঁচ দিন ধরেই কুয়াশার আড়ালে ঢাকা রয়েছে সূর্য। সকাল থেকে বিরাজ করছে মেঘাচ্ছন্ন পরিবেশ। তীব্র শীতে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের পেশাজীবীরা। পাথর-চা শ্রমিক, দিনমজুর থেকে শুরু করে নানা শ্রমজীবী মানুষ। কমে গেছে তাদের দৈনন্দিন রোজগার। পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিনযাপন করছেন তারা। প্রয়োজন ছাড়া অনেকে ঘর থেকে বের না হলেও জীবিকার তাগিদে শীত উপেক্ষা করেই কাজে বেরিয়েছেন নিম্ন আয়ের পেশাজীবীরা। বিপাকে পড়েছেন চাষিরাও। তারাও ঠান্ডার প্রকোপে খেতখামারে কাজ করতে পারছেন না। এ ছাড়া শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষদের মিলছে না প্রয়োজনীয় গরম কাপড়। রাস্তায় চলা ভবঘুরে মানুষরাও পড়েছে শীত দুর্ভোগে।

এদিকে রাত ও দিনের তাপমাত্রা প্রায় কাছাকাছি হওয়ায় দিনের তাপমাত্রা রেকর্ড হচ্ছে ১৫ থেকে ১৬ ডিগ্রির মধ্যে। সন্ধ্যার পর আবার ঠান্ডা বাতাস প্রবাহিত হওয়ায় কোলাহলহীন হয়ে পড়ে শহর ও গ্রামের হাটবাজারগুলো। বাজারগুলোতে বিভিন্ন জায়গায় কাগজের কাটন, টায়ার ও কাগজে আগুন ধরিয়ে শীত নিবারণ করতে দেখা যায়।

স্থানীয়রা জানান, আজকে নিয়ে গত চার দিন ধরে সকাল থেকে দেখা মিলছে না সূর্যের। এতে করে পরিবারসহ বিপাকে পড়েছে গৃহপালিত প্রাণীরাও। ভোর-সকালে কাজ করা যাচ্ছে না। কাজ করতে গিয়ে হাত-পা অবশ হয়ে আসে। ছেলে-মেয়েরাও ঠিকমতো পড়ালেখা করতে পারছে না। সন্ধ্যার পর থেকে পুরো রাত বরফ হয়ে উঠে। ঘরের আসবাবপত্র, বিছানাপত্র, ঘরের মেঝে পর্যন্ত স্পর্শ করলে বরফের মতো ঠান্ডা মনে হয়। ঘরের গৃহিণীদের কাজ করতে কষ্ট হচ্ছে। আয় রোজগার কমে যাওয়ায় অনেকে পরিবারের কথা চিন্তা করেই এই হাড় কাঁপা শীত উপেক্ষা করে কাজে বেরিয়েছেন।

জেলার তেঁতুলিয়ার সদর এলাকার হোসেন আলী, আলাউদ্দিন ও আবুল কালামসহ কয়েকজন দিনমজুর ঢাকা পোস্টকে জানান, গত কয়েক দিন ধরে মেঘ-কুয়াশায় দেখা যাচ্ছে না সূর্য। কাজ করতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। ঠান্ডা বাতাসের কারণে কাজ করতে গিয়ে হাত-পা অবশ হয়ে আসে।

জুয়েল, আইনুল ও সায়েদসহ কয়েকজন পাথর শ্রমিক বলেন, একদিকে প্রচুর ঠান্ডা। তার মধ্যে নদীর পানি বরফের মতো। শীতে বসে থাকার উপায় নেই। ঠান্ডায় ঘরে বসে থাকলে তো পেটে ভাত যাবে না। পেটের ক্ষুধা তো শীত বুঝে না। তাই পরিবারের কথা চিন্তা করেই নদীতে পাথর তুলতে নামছি। এই পাথরই আমাদের রুটি-রুচি। কাজ না করলে পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেকে কষ্টে দিনযাপন করতে হয়।

ভ্যানচালক হামিদ আলী, হাসমত আলী ও দেলোয়ার ঢাকা পোস্টকে জানান, এই শীতে ইনকাম কমে গেছে। হাড় কাঁপা শীতের কারণে সহজে কেউ ভ্যানে চড়তে চায় না। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে বেলা দেখা যাচ্ছে না। এতে আয় রোজগার কমে গেছে।

এদিকে শীতের কারণে নিউমোনিয়া, অ্যাজমা, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়াসহ শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু থেকে বয়স্ক মানুষ। জেলা ও উপজেলার হাসপাতালগুলোর আউটডোরে ঠান্ডাজনিত রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। চিকিৎসার পাশাপাশি শীতজনিত রোগ থেকে নিরাময় থাকতে বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করছেন চিকিৎসকরা।

আপনার মন্তব্য লিখুন

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ
  • © All rights reserved © 2019 alokitoswapner-bd.com - It is illegal to use this website without permission.
Design & Developed by Freelancer Zone
themesba-lates1749691102