প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরাতো আয়ুব খানের আমল থেকে আন্দোলন করি, রাস্তায় থাকি। এমন না যে নতুন আসছি, স্কুল জীবন থেকেইতো রাস্তায় আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি। আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে করেছি, ইয়াহিয়া খানের বিরুদ্ধে করেছি, জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া, সবাইতো ভোট চোর। আওয়ামী লীগের ভোট চুরি করা লাগে না। আওয়ামী লীগের তো জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দেয়।
আজ শুক্রবার বিকেল ৪টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কাজের মধ্যে দিয়ে মানুষের আস্থা অর্জন করি আমরা। আর এ দেশের মানুষ এখন জানে, নৌকায় ভোট দিয়ে স্বাধীনতা পেয়েছে। নৌকায় ভোট দিয়ে অর্থনৈতিক মুক্তি পেয়েছে, নৌকায় ভোট দিয়ে মানুষের জীবন উন্নত হয়েছে।নির্বাচন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা নির্বাচন বয়কট করেছে, অথবা নির্বাচনকে কলুষিত করেছে, অথবা ভোট চুরি করেছে, ভোট ডাকাতি করেছে তাদের কাছ থেকেই শুনতে হয়ে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা, বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য হলো সেটাই। যারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে, ক্ষমতায় এসে, জনগণের ভোট চুরি করে, ক্ষমতায় থেকে দেশ পরিচালনা করেছে, সেই সময় নির্বাচন নিয়ে যাদের উদ্বেগ দেখি নাই, অথচ সেই ২০০৮ এর নির্বাচনে যখন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন হলো, যে নির্বাচনে বিএনপি পেয়েছিল মাত্র ২৯টা সিট, তাদের আবার বিএনপি-জামায়াত ২০ দলীয় ঐক্যজোট, ২০ দলীয় ঐক্যজোটের মূল প্রাপ্তি ছিল ২৯ সিট, পরে আবার বাই ইলেকশনে একটা মোট ৩০টা, এখন ২০১৪ এর ইলেকশন ঠেকাতে গিয়ে তারা অগ্নি-সন্ত্রাস, মানুষ হত্যা, এমন কোনো অপকর্ম নাই, তারা করেনি। জনগণের সম্পদ পোড়ানো সবই করল। এরপরে আবার তাদের অবরোধ, মানুষ হত্যা আমরা দেখলাম। ২০১৮ এর ইলেকশনে যোগ দান করে ৩০০ সিটে ৭০০ এর ওপরে নমিনেশন দিয়ে নিজেরাই মারামারি করে ইলেকশন থেকে সরে গেল। সরে গিয়ে ইলেকশনটাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করল। এখন তাদের মুখে আমরা অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা শুনি এবং সব জায়গায় এটা প্রচার করে বেড়াচ্ছেন।’
তিনি বলেন, ‘আমেরিকা ও অন্যান্য দেশ হঠাৎ আমাদের দেশের নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলে। আমার প্রশ্নটা হচ্ছে, যখন মেলিটারি ডিক্টেটর ছিল, যখন আমরা সংগ্রাম করেছি, জনগণের ভোটের অধিকার জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য, আমরা সংগ্রাম করেছি ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ের জন্য, আমরা স্লোগান দিয়েছি “আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব”। এবং নির্বাচনের যে সংস্কারগুলি- ছবিসহ ভোটার তালিকা, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন পাস করা, নির্বাচন কমিশন যেটা সম্পূর্ণ প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের ওপর নির্ভরশীল ছিল, তাদেরকে আলাদা করে দিয়ে সেটাকে আরও শক্তিশালী করা, জনগণের ভোটের অধিকার বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি এবং জনগণের অধিকার জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া এটাতো আওয়ামী লীগই করেছে।
আন্দোলন সংগ্রামের কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগের জোট আন্দোলন করেই কিন্তু যার জন্য অনেক মানুষকে রক্ত দিতে হয়েছে। আমি সেই কথাটা বলেছি তাদেরকে, আমাকে নির্বাচন অবাধ নিরপেক্ষ শেখাতে হবে না। কারণ বাংলাদেশের জনগণের ভোটের অধিকার, আন্দোলন সংগ্রাম, এটা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই আমরা করেছি, তারপরেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সেই নির্বাচন হয়েছে বলেই, জনগণ আমাদের বারবার ভোট দিয়েছে, আর একটানা আছি বলেই, আজকে অর্থনৈতিক উন্নতিটা হয়েছে। ৭৫ সাল থেকে ১৯৯৬, ২০০১ থেকে ২০০৮ এই ২৯ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল, দেশকে কী উন্নতি দিয়েছে? মানুষের ভাতের ব্যবস্থা করতে পেরেছে, পারে নাই। দুর্ভিক্ষ ছিল, সবসময় উত্তরবঙ্গে দুর্ভিক্ষ লেগেই থাকত, দক্ষিণেও। মানুষ একবেলা খাবার যোগাতে পারত না। ছেড়া কাপর, বিদেশ থেকে পুরান কাপড় এনে পারাত। আর স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পুষ্টিহীনতা, এমনকি নারীর ক্ষমতায়নও ছিল না। আজ যতটুকু বাংলাদেশের মানুষ পাচ্ছে, সেটাতো আওয়ামী লীগ, আমরা ক্ষমতায় আসার পর থেকেইতো এই উন্নতিটা হচ্ছে। তাহলে এখন এত প্রশ্ন আসে কেন, সেটাই আমার কথা। তাহলে কি একটা দেশ এত দ্রুত উন্নত করে ফেলছে, সেটাই কি সবার মথা ব্যথার করণ হয়ে গেল কি না। এটিকে কিভাবে নষ্ট করা যায় কি না, সেই প্রচেষ্টা কি না।’
জাতিসংঘের ৭৮তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদান ও যুক্তরাজ্য সফরের নানা দিক তুলে ধরতে সংবাদ সম্মেলন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে ১৬ দিনের সফর শেষে গত বুধবার দেশে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী। ওইদিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী ফ্লাইট হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্কে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অধিবেশনে অংশ নেওয়ার ফাঁকে অন্যান্য উচ্চ পর্যায়ের ও দ্বিপক্ষীয় বৈঠকসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থানের সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন এবং বাংলাদেশ দূতাবাস পরিদর্শন করেন শেখ হাসিনা। এরপর প্রধানমন্ত্রী ৩০ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটন থেকে লন্ডনে যান। সেখান থেকে দেশে ফেরার আগে শেখ হাসিনা বাংলাদেশিদের পক্ষ থেকে দেওয়া এক সংবর্ধনায় যোগ দেন।