আক্কাস সিকদারের রোসানলে ঝালকাঠির সাংবাদিক যত।
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
.উকিল হয়েও নিজেকে সাংবাদিক হিসেবে দাবিদার আক্কাস সিকদার সাংবাদিকদের স্বার্থ রক্ষার সংগঠন প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক ছিলেন। অথচ তিনিই পদে পদে সাংবাদিকদের হয়রানি আর হামলা-মামলায় পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছেন বলে অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে।
সাংবাদিকদের কোনো প্রতিবেদনে ক্ষতিগ্রস্ত অপরাধীর পক্ষ নিয়ে এই আক্কাস সিকদার নানারকম ফন্দি-ফিকির চালিয়ে থাকেন। শুরুতেই টার্গেট করা সাংবাদিকের পত্রিকা বা টিভি চ্যানেলের কার্যালয়ে নামে বেনামে নানা কল্পিত অভিযোগ পাঠিয়ে সংশ্লিষ্ট সংবাদকর্মিকে চাকুরিচ্যুত করার পাঁয়তারা চালানো হয়।
এরপর ভুক্তভোগী সাজিয়ে থানায় কিংবা আদালতে দায়ের করা হয় মামলা। প্রেসক্লাব সম্পাদক হিসেবে এসব হয়রানির নেপথ্যের ইন্ধনদাতা হন তিনি।
নানা পদ পদবীর একাধিক পরিচিতি ব্যবহার করে ‘বহুরুপী আক্কাস সিকদার’ বিভিন্ন সময়ে ঝালকাঠির ডজনখানেক সাংবাদিককে হেনস্থা, মামলা, হামলা, পত্রিকাচ্যুত করেছেন।
বাদ পড়েনি জুনিয়র-সিনিয়র কেউ। তার সিদ্ধান্তের বাইরে গেলেই প্রেসক্লাবের সদস্যপদ পর্যন্ত হারাতে হয়েছে অনেককে।
সাংবাদিক কাম উকিল পরিচয়ের আক্কাস সিকদারের ভয়ঙ্কর অত্যাচার থেকে রক্ষা পেতে এরইমধ্যে ভুক্তভোগী সাংবাদিকরা প্রেস কাউন্সিল, বার কাউন্সিল, আইনজীবি সমিতি ও ঝালকাঠি জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ পাঠিয়েছেন।
ঝালকাঠি শহরের উপজেলা পরিষদের সামনে বাপের ছোট্ট একটি চায়ের দোকান থেকে তার উৎপত্তি। কখনো বাদাম বিক্রি কখনো টেনিস বল টোকানো এই আক্কাস এখন ঝালকাঠি প্রেসক্লাবের দু’বারের সাধারণ সম্পাদক। তার হাতে এখন কুক্ষিগত ঝালকাঠি প্রেসক্লাব। যখন যাকে যে পদে বসাবেন তিনি সেই পদেরই অধিকারী হবেন। যার কারনে প্রেসক্লাবের কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়না। এমনকি তার মোটর সাইকেল ড্রাইভারকেও প্রেসক্লাবের সদস্যপদ প্রদান করলেও কেউ টু শব্দটিও করতে সাহস পায়নি। আককাস বাসসেরও জেলা প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দৈনিক সমকাল প্রতিনিধি জিয়াউল হাসান পলাশ ও যমুনা টিভির প্রতিনিধি দুলাল সাহা তার কৌশলী রোষানলে পড়েন। নিম্মমানের ঠিকাদারী কাজের ও কাজ না করে বিল উঠিয়ে নেয়ার সংবাদ প্রকাশ করায় ওই ঠিকাদারকে পরামর্শ দিয়ে চাঁদাবাজি মামলা করিয়ে জেলহাজত খাটিয়েছেন।
একুশে টিভির প্রতিনিধি আজমীর তালুকদারকে রাজাপুরে একটি সংবাদ প্রকাশের ঘটনা সাজিয়ে তার নিকটাত্মীয় ব্যক্তিকে বাদী সাজিয়ে ৩০ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুলে মামলা দায়ের করায়। এ ঘটনায় আসামি করা হয় আজমীর তালুকদারের স্ত্রীকেও।
সংবাদ প্রকাশের কারনে সাংবাদিকদের উপর হামলা, মামলা ও হয়রানি চালানোর প্রতিটি ঘটনার পেছনেই বাসস সাংবাদিক আক্কাসের হাত থাকার গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। সর্বত্রই তার কুটকৌশলের কারণেই ভয়ঙ্কর খেসারত দিতে হয় সাংবাদিকদের।
সংবাদ প্রকাশ হলেই সাংবাদিক আক্রান্ত
কতিপয় সংবাদকর্মীকে বছর দুয়েক আগের ঘটনা। শহরের বিশ্বরোডের এক ধনাঢ্য পুত্র তার মাকে গরুঘরের পাশে বছরের পর বছর থাকতে দিয়ে মানবতা লঙ্ঘিত করছিল। এমন খবরে ঝালকাঠির দিনকালের প্রতিনিধি ওমর ফারুক, যায়যায়দিনের তৎকালীন প্রতিনিধি এমদাদুল হক স্বপনসহ ৪-৫ জন সাংবাদিক ঘটনাস্থলে যান। খবর পেয়ে আক্কাাস গৃহকর্তাকে বাঁচাতে তাকে বাদি সাজিয়ে একটি চাঁদাবাজি মামলা দায়ের করান। পরে তদন্তে চাঁদাবাজির ঘটনা প্রমানিত হয়নি।
এদিকে বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিনিধি এসএম রেজাউল করিমসহ ২-৩ জন সাংবাদিককে অপসাংবাদিক আখ্যা দিয়ে ঝালকাঠি ছাড়তে হুলিয়া পর্যন্ত জারি করা হয়েছিল। দৈনিক দক্ষিনাঞ্চলের তৎকালীন প্রতিনিধি এজিএম মিজানুর রহমানকে প্রকাশ্যে আইনজীবি সমিতির হলরুমে লাঞ্ছিত করে তাকে দুটি মামলা দিয়ে হয়রাণী করে এই আক্কাস সিকদার।
দৈনিক আমাদের সময়ের প্রতিনিধি এসএম রাজ্জাক পিন্টুকে অপসাংবাদিক আখ্যা দিয়ে তার বিরুদ্ধেও মামলা করাতে উদ্যত হয়।
মোহনা টিভি ও আলোকিত বাংলাদেশ’র প্রতিনিধি রুহুল আমিন রুবেল, বশির উদ্দিন খলিফাকে একাধিক চাঁদাবাজি মামলা দিয়ে ও মনির হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে দিয়ে ফেসবুকে মিথ্যা, মনগড়া ও কুরুচিপূর্ণ লেখা লিখিয়ে হয়রানি ও অর্থদন্ড করিয়েছেন।
এছাড়াও দৈনিক তৃতীয়মাত্রা ও বাংলা দর্পনের তৎকালীন ঝালকাঠি প্রতিনিধি উদিয়মান সাংবাদিক জুবায়ের আদনানের নামে উদ্দেশ্যমূলক ভাবে সংবাদ প্রকাশ করে। প্রাপ্ত বয়ষ্ক এক তরুনীকে কিশোরী সাজিয়ে ইন্ধন দিয়ে মামলা করিয়ে নিজেই আদনানের বিপক্ষের আইনজীবী হয়ে আদালতে লড়ছেন এই দ্বৌত পেশার আক্কাস সিকদার।
সর্বোপরি এই আক্কাস সিকদারের কবলে ঝালকাঠির অগনিত সাংবাদিক হয়রানি ও নিগ্রহের শিকার হচ্ছেন। ভুক্তভোগী অধিকাংশ সাংবাদিক মানসম্মানের ভয়ে প্রতিবাদটুকুও করেন না, বরং মুখ বুজে সহ্য করাকেই শ্রেয় মনে করেন। তার নাকি হাত অনেক লম্বা। কখনো আইনজীবি কখনো সাংবাদিক হিসেবে ঝালকাঠি জেলার সর্বত্র বেপরোয়া তদবির বাণিজ্যও চলে তার। এছাড়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় স্থানীয় প্রশাসনও তাকে সমীহ করে থাকে। প্রেসক্লাব সেক্রেটারী আক্কাসের নামে বিভিন্ন ক্লিনিক, ইটভাটা সমিতি, কাজী সমিতি, বালি উত্তোলনকারী, আড়ৎপট্টি, টমটম, অটো, বাস মালিক সমিতিসহ বিভিন্ন স্পট থেকে দেদারছে মাসোয়ারা উত্তোলন হওয়ার খবর জানা গেছে। সাংবাদিক হয়রানির নেপথ্য ইন্ধনদাতা হিসেবে চিহ্নিত আক্কাস সিকদারের ঘনিষ্ঠ সহযোগিরা প্রচার করে বেড়ান তার হাত অনেক লম্বা। নেতা তার পরামর্শ ছাড়া নাকি একটা পদক্ষেপও নেন না, জেলা প্রশাসন তার কাছেই জিম্মি থাকে। স্থানীয় আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ ক্ষমতাসীন দল-সংগঠনের নেতা কর্মিরাও নাকি সিকদারের ভয়ে তটস্থ থাকেন।
সম্প্রতি সরকারের প্রভাশলী দুই মন্ত্রীকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে কটুক্তি করায় তার বিরুদ্ধে ঝালকাঠি জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদিকা শারমিন মৌসুমি
কেকা বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরর পর আত্মগোপনে রয়েছে আক্কাস সিকদার।