শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:৫৭ অপরাহ্ন

নাগরপুরে খেজুরের রস আহরণে ব্যস্ত গাছিরা

আলোকিত স্বপ্নের বিডি
  • প্রকাশের সময় : শনিবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২৫

দেশের সর্বত্র মৃদু কুয়াশা শীতের আগমনী বার্তা দিচ্ছে। আর মাত্র কিছুদিনের মধ্যে শীত শুরু হবে পুরোদমে। এরই মধ্যে ভোরে লতা-পাতা ও ঘাসের ওপর শিশিরের বিন্দু ঝরে পড়ছে।

শিশির ভাঙার সঙ্গে সঙ্গে গ্রামের চাষিরা ছুটে যাচ্ছে ফসলের ক্ষেতে, কেউ আবার বপন করছেন হলুদের অপরূপ সৌন্দর্যের সরিষা। এই মৌসুমে শীত শুরুর সঙ্গে সঙ্গে খেজুর গাছ প্রস্তুত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন খেজুরের রস সংগ্রহকারী গাছিরা।

প্রকৃতির ছোঁয়ায় টাঙ্গাইলের নাগরপুরে এবার শীতের দেখা আগেই মিলেছে। দিনে সূর্যের তাপ এবং রাতে কুয়াশার সঙ্গে বইছে হিমেল হাওয়া। ভোর থেকেই গাছিরা দা দিয়ে খেজুর গাছ কেটে রস সংগ্রহে ব্যস্ত। কয়েক দিনের মধ্যেই গাছ থেকে সংগ্রহ করা রস দিয়ে তৈরি হবে গুড় ও পাটালি।শীতের সকালে গ্রামের গৃহস্থ বাড়িতে খেজুরের রস দিয়ে বানানো হবে মুখরোচক পিঠা, পায়েসসহ নানা ধরনের ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি খাবার। কেউ আবার হাঁকডাক দিয়ে বিক্রি করবেন খেজুরের ঠান্ডা রস।

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার ঘিওরকোল, সহবতপুর, মামুদনগর, কলমাইদ, কাউয়াখোলা, ধুকুড়িয়া, শুনশীসহ আশপাশের গ্রামের কাঁচা ও পাকা মেঠো রাস্তার পাশে সারি সারি খেজুর গাছ কাটতে ব্যস্ত গাছিরা। এ সময় গাছিরা বিশেষ কায়দায় কোমরে রশি বেঁধে গাছের উপরে ওঠেন। গাছের উপরের অংশের ছাল বের করার এক সপ্তাহ পর হালকা কেটে তাতে বাঁশের নল লাগানো হয়। এরপর সেখান থেকে রস সংগ্রহ করা হয়।

খেজুর রস সংগ্রহকারী গাছি মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, বাপ-দাদার ঐতিহ্যবাহী পেশায় প্রায় ১৫ বছর ধরে নাগরপুরে খেজুর রস সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত আছি। আমি রাজশাহীর বাঘা থানা থেকে প্রতি বছর শীত মৌসুমে এখানে কাজ করি।

স্থানীয়ভাবে গাছি না থাকায় এলাকাবাসীর কোনো আপত্তি নেই। খেজুরের রস দিয়ে আগাম গুড় ও পাটালি বানালে লাভ বেশি হয়, সেই আশাতেই চলতি বছরও গুড় তৈরির দিকে ঝুঁকছেন গাছিরা।

তিনি আরও বলেন, ২০-২৫ দিন আগে থেকে কাজ শুরু করেছি। গাছের ময়লা ও অপ্রয়োজনীয় ডালপালা ছেঁটে ফেলা হয়েছে। ধারালো দা দিয়ে খেজুর গাছের সোনালি অংশ বের করে নোল স্থাপনের কাজও শেষ। রস সংগ্রহের জন্য গাছে মাটির পাতিল লাগানো হয়েছে। শুরু হয়েছে সুস্বাদু খেজুর রস সংগ্রহের কাজ, যা দিয়ে গুড় ও পাটালি তৈরি হবে।গাছিরা জানান, একবার গাছ ছাঁটলে তিন-চার দিন রস সংগ্রহ করা যায়, এরপর তিন দিন গাছ শুকাতে হয়। এভাবে করলে রস সুমিষ্ট হয়। রস সাধারণত কার্তিক থেকে ফাল্গুন মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত সংগ্রহ করা যায়। এ রস থেকে তৈরি গুড় ও পাটালি উপজেলায় চাহিদা অনুযায়ী বিক্রি করা হয়। দূর-দূরান্ত থেকেও ক্রেতারা পরিবারে খাটি গুড় সংগ্রহ করতে আসে।

তারা আরও জানান, ভোরে গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে তা জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করা হয়। গাছভেদে প্রতি গাছ থেকে দুই থেকে পাঁচ কেজি রস পাওয়া যায়। প্রতি কেজি রস বিক্রি হয় ১২০–১৫০ টাকায়, আর গুড় বিক্রি হয় ৬০০ টাকায়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এস.এম. রাশেদুল হাসান বলেন, খেজুরের রস এবং গুড় সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ঐতিহ্যবাহী খাবার। দিন দিন খেজুর গাছের সংখ্যা কমছে, ফলে গাছিও কম। প্রতি বছরের মতো এবারও উত্তরাঞ্চল থেকে গাছিরা রস সংগ্রহ করতে এসেছে।

উপজেলায় প্রায় এক হাজার খেজুর গাছ রয়েছে। কৃষকরা আগ্রহী হলে খেজুর গাছ পরিচর্যায় প্রশিক্ষণ এবং উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা দেওয়া হবে।

আপনার মন্তব্য লিখুন

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরো সংবাদ
  • © All rights reserved © 2019 alokitoswapner-bd.com - It is illegal to use this website without permission.
Design & Developed by Freelancer Zone
themesba-lates1749691102