ইসরায়েলকে ‘গণহত্যাকারী রাষ্ট্র’ হিসেবে অভিহিত করেছেন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ। একইসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, দেশটির সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে মাদ্রিদ।
বুধবার (১৪ মে) স্পেনের পার্লামেন্ট অধিবেশনে দেওয়া এক বক্তব্যে সানচেজ বলেন, “আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই— একটি গণহত্যাকারী রাষ্ট্রের সঙ্গে আমরা আর বাণিজ্যিক সম্পর্ক রাখছি না। (ইসরায়েলের সঙ্গে) কোনো বাণিজ্য হবে না।”
পার্লামেন্টে কড়া অবস্থান
এই মন্তব্য দেন সানচেজ, যখন কাতালান রাজ্যের এমপি গ্যাব্রিয়েল রাফিয়ান গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। রাফিয়ান স্পেনের বামপন্থি সুমার পার্টির নেতা, যাদের সঙ্গে সানচেজের সোস্যালিস্ট পার্টির জোট রয়েছে।
সরকারি সূত্র বলছে, কিছুদিন আগেই স্পেন ইসরায়েলের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করেছে। তবে প্রধানমন্ত্রী সানচেজ বুধবারই প্রথমবারের মতো এই তথ্য প্রকাশ্যে আনেন।
ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া
স্প্যানিশ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পরদিনই (বৃহস্পতিবার) স্পেনে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত আনা সলোমনকে তলব করেছে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এক বিবৃতিতে জানানো হয়, মাদ্রিদের এ ধরনের অবস্থানকে তারা ‘একপেশে ও অনভিপ্রেত’ বলেই মনে করছে।
গাজায় চলমান সংকট
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজা নিয়ন্ত্রণকারী হামাস যোদ্ধারা ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামলা চালিয়ে ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যা করে এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে। এর প্রতিক্রিয়ায় গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী (আইডিএফ)।
সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, এ পর্যন্ত গাজায় প্রাণ হারিয়েছেন ৫২ হাজার ৯০০ জন এবং আহত হয়েছেন ১ লাখ ১৯ হাজারেরও বেশি। জানুয়ারি মাসে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করলেও মার্চে পুনরায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। দ্বিতীয় দফার অভিযানে গত এক মাসে আরও দেড় হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও মানবাধিকার উদ্বেগ
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) গণহত্যার অভিযোগে মামলা হয়েছে। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বারবার গাজায় হামলা বন্ধের আহ্বান জানালেও তা উপেক্ষা করে চলেছে নেতানিয়াহুর সরকার।
নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, “হামাসকে সম্পূর্ণভাবে দুর্বল করা এবং জিম্মিদের মুক্ত করা পর্যন্ত অভিযান চলবে।” তবে ইসরায়েলের অভ্যন্তরেও শান্তির আহ্বান এবং জিম্মিদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ জোরদার হচ্ছে।