ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী চলন্ত বাসে ডাকাতি ও নারী যাত্রীদের যৌন নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিরা মাদকাসক্ত। বাস থেকে লুট করা একটি মোবাইল ফোনের বিনিময়ে গাঁজা নেন তারা। ওই গাঁজা বিক্রেতার সূত্র ধরেই সন্ধান মেলে ডাকাত চক্রের সদস্যদের। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে তিন জনকে গ্রেপ্তার করে। মামলার তদন্ত ও আসামিদের গ্রেফতারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা এ তথ্যগুলো জানিয়েছেন।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ডাকাতির ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিরা অতিমাত্রায় মাদকাসক্ত। নেশার টাকা জোগাড় করতে তারা সাভার ও আশুলিয়া এলাকায় ডাকাতি, ছিনতাই ও নানা অপকর্ম করে থাকে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (দক্ষিণ) উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আহসানুজ্জামান জানান, তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার করে বুঝতে পারেন ডাকাত দলের সদস্যরা সাভার আশুলিয়া এলাকার। তখন তিনি তার একজন তথ্যদাতার (সোর্স) মাধ্যমে জানতে পারেন ওই এলাকার নেশাখোর কিছু যুবক বাসে ডাকাতি, চুরি ও ছিনতাই করে থাকে। তারা সাভার এলাকার একজন মাদক কারবারির কাছ থেকে নিয়মিত গাঁজা ও হেরোইন কেনে। গত শুক্রবার বিকালে সাভারের চন্দ্রা-নবীনগর সড়কের একটি পেট্রলপাম্পের সামনে থেকে ওই মাদক কারবারিকে আটক করা হয়।
এসআই মো. আহসানুজ্জামান বলেন, ‘২২ থেকে ২৩ বছরের ওই মাদক কারবারি পুলিশকে জানান, কিছুদিন আগে একটি মোবাইল ফোন সেটের বিনিময়ে তাঁর কাছ থেকে শহিদুল, সবুজ, শরীফুজ্জামানসহ কয়েকজন গাঁজা নিয়ে গেছে। তখন ওই মাদক কারবারিকে সঙ্গে নিয়ে পুলিশ শহিদুলদের সন্ধানে বের হয়। বিকেল পাঁচটার দিকে সাভারের গেন্ডা এলাকার অটোমোবাইলের গ্যারেজ থেকে ঘুমন্ত অবস্থায় মো. সবুজ ও শরীফুজ্জামানকে আটক করা হয়। পরে আটক করা হয় ডাকাত দলের আরেক সদস্য শহিদুল ইসলামকে। জিজ্ঞাসাবাদে সবাই ডাকাতির সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।’
গ্রেফতার শহিদুল ইসলাম ওরফে মহিদুল ওরফে মুহিত মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার লাউতারা গ্রামের বদর উদ্দিন শেখের ছেলে, সবুজ শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার রামকৃষ্ণপুর গ্রামের ইসমাইল মোল্লার ছেলে ও শরীফুজ্জামান সাভারের টানগেন্ডা এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে। শহিদুল ইসলামের নামে দুটি বাসে ডাকাতি ও তিনটি মাদক মামলা রয়েছে। শহিদুলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে ডিবি পুলিশ।
পুলিশ জানায়, মো. সবুজ ও শরীফুজ্জামান শরীফ টাঙ্গাইলের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত আরও তিন জনের নাম-ঠিকানা তারা জানিয়েছেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আহসানুজ্জামান বলেন, ‘বাসে ডাকাতির সময় নারী যাত্রীদের ধর্ষিত হওয়ার ঘটনা ঘটেনি। তবে নারী যাত্রীরা যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্য যাদের শনাক্ত করা গেছে, তাদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’
প্রসঙ্গত, গত সোমবার মধ্যরাতে ইউনিক রোড রয়েলসের (আমরি ট্রাভেলস) একটি বাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। রাত ১১টায় ঢাকার গাবতলী থেকে বাসটি ছাড়ে। দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বাসটি নিয়ন্ত্রণে নেয় ডাকাতরা। তিন ঘণ্টা ধরে বাসটিকে বিভিন্ন স্থান ঘুরিয়ে যাত্রীদের টাকাপয়সা ও মালামাল লুণ্ঠন করে। এ সময় নারী যাত্রীদের যৌন নির্যাতনও করা হয়। ঘটনার তিন দিন পর গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ওমর আলী নামের এক যাত্রী মির্জাপুর থানায় মামলা করেন।