তিস্তাপাড়ের বন্যায় লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের ৮ উপজেলায় প্রায় ৬০ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। প্রায় ১৫ হাজার পরিবার নিদারুণ কষ্টে দিনানিপাত করছে। অনেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র ও গবাদিপশু-পাখি নিয়ে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন সরকারি রাস্তা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধের ওপর।
রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
দেখা যায়, লালমনিরহাট সদর উপজেলার তিস্তা রেলস্টেশনের কাছে রেললাইনের ওপর বন্যার পানি ওঠায় লালমনিরহাট-ঢাকা রেলরুটে ট্রেন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। বন্যাদুর্গত এলাকার আমন ও শাক-সবজির খেত পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন লালমনিরহাট রেলওয়ের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) আবদুল্লাহ আল মামুন।
তিনি বলেন, লালমনিরহাট-ঢাকা রেলরুটের লালমনিরহাট সদর উপজেলার তিস্তা রেল স্টেশনের কাছে প্রায় ৫০০ মিটার রেল লাইনের ওপর বন্যার পানি উঠে। এ কারণে রোববার সকাল থেকে ওই রুটে ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়। রোববার দুপুরের পর পানি কমায় ট্রেন চলাচল শুরু হয়। তবে ওই স্থানে ট্রেন ধীরগতিতে চলাচল করছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, তিস্তা নদীর পানি বেড়ে আজ রোববার দুপুর ৩টা থেকে রংপুরের কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার দোয়ানী এলাকায় তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া, ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, দুধকুমার ও জিনজিরামসহ সব নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। তিস্তা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলা ও কুড়িগ্রামের তিন উপজেলায় নদী তীরবর্তী ১০০টি গ্রাম ও চর এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
পানিবন্দি হয়ে স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, রোববার ভোরে তাদের বাড়িতে ৩ থেকে ৪ ফুট পানি ওঠে। তারা প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র ও গবাদিপশু-পাখি নিয়ে সরকারি রাস্তার ওপর আশ্রয় নিয়েছেন। তার দশ বিঘা জমির আমন ধানের মধ্যে ৭ বিঘা জমির ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। প্রায় এক বিঘা জমির শাক-সবজি খেতও পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে।
তবে কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বন্যার পানিতে আমনের তেমন ক্ষতি হবে না। উল্টো বন্যার পানির কারণে আমনের উপকার হবে। তবে দ্রুত বন্যার পানি না নামলে পানির নিচে তলিয়ে থাকা শাক-সবজির ক্ষতি হবে।
এ দিকে লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, অনবরত বৃষ্টি আর উজানের পানিতে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে তিস্তাপাড়ে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি না হলে আর উজান থেকে পানি আসা বন্ধ হলে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বন্যার পানি এলাকাগুলো থেকে নামতে শুরু করবে।
এ বিষয়ে লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, লালমনিরহাটে ১০ হাজার পানিবন্দি পরিবারের জন্য নগদ তিন লাখ টাকা ও ৯০ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও শিশু খাদ্যের জন্য পাঁচ লাখ ও গোখাদ্যের জন্য পাঁচ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। রোববার সকাল থেকে পানিবন্দি এ পরিবারগুলোর মাঝে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।